রণবীর ঘোষ কিংকর :
ঘুড়ি। পাতলা কাগজ, পলিথিন ও বাঁশের কঞ্চিতে তৈরি বিনোদনের এক বিলাসী সামগ্রী। বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুতে দক্ষিণা হাওয়ায় সাথে তাল মিলিয়ে ঘুড়ি সুতায় বেঁধে মুক্ত মনে খোলা আকাশে উড়ানোর সখ কম বেশি সব বয়সী লোকেরই থাকে।
ছেলেদের শৈশবের নানা স্মৃতির মধ্যে ঘুড়ি উড়ানোর দূরত্বপনার স্মৃতি কারও জীবনে কোন অংশে কম নয়। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক এমনকি বৃদ্ধরাও কম যায় না।
প্রাচীণকাল থেকে বিনোদনের এই মাধ্যমটি চলে আসছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় এর প্রচলণ সবচেয়ে বেশি। আর বিনোদন প্রেমী বাঙ্গালীও তার থেকে পিছিয়ে নেই।
এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছিল অধিকাংশ মানুষ। আর কর্মহীনতার ক্লান্তি দূর করতে ঘুড়ি প্রেমীরা মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে অলস সময় অতিবাহিত করেন। গ্রীষ্ম শেষে বর্ষা শুরু হলেও থেমে নেই ঘুড়ি তৈরি বা ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। লকডাউন শিথিল হয়ে মানুষ কর্মে যোগদান করলেও ঘুড়ি উড়ানোর নেশা কাটেনি অনেকের। আষাঢ়ের থেমে থেমে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
কি দিন আর কি রাত। কুমিল্লা জুড়ে সর্বদাই উড়ছে ঘুড়ি। দিনের বেলায় নীল আকাশে উড়া রং-বেরংয়ের ঘুড়ি রাতেও যেন আকাশের এক একটি নক্ষত্র। রাতের ঘুড়িতে সৌখিন ঘুড়ি প্রেমিদের রয়েছে বিলাসীতা। ঘুড়িতে লাল-নীল রংয়ের এলইডি আলো জ্বালিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে তারা। অনেক সময় রাতের ওই ঘুড়িগুলো দেখলে মনে হয় যেন নীল আকাশের মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়োজাহাজের ছুটা-ছুটি।
সরেজমিনে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুড়ে দেখা গেছে- কুমিল্লার ঘুড়ি প্রেমীরা সাপ, ঢাউস, পতাকা, বাক্স, চিল, উড়োজাহান, অক্টোপাস, তারা সহ বিভিন্ন ঘুড়ি উড়তে দেখা গেছে। কেউবা খোলা মাঠে, কেউবা ফসলী মাঠের আইলে, কেউবা রাস্তায় আবার কেউবা বাসার ছাদে মনের সুখে ঘুড়ি উড়াচ্ছে। আবার বিভিন্ন এলাকায় উচ্চতা ও আকারের প্রতিযোগিতায় ঘুড়ি তৈরি করে উড়াতে দেখা গেছে।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নে ‘পানিপাড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ২২ ফুট উচ্চতার সাপ ঘুড়ি (যা আঞ্চলিক ভাষায় ‘পানক ঘুড়ি’ হিসেবে খুব বেশি পরিচিত) উড়াতে দেখা গেছে।
দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামের শিক্ষক জাহের সরকার। তিনি মাতৃভূমি স্কুল এন্ড কলেজ রায়পুর শাখায় কর্মরত। চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সখের বসে বানিয়েছেন নানা রঙ্গের হরেক রকম ঘুড়ি। তার ওই ঘুড়ি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে যান অনেক ঘুড়ি প্রেমী।
লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের কেন্দ্রিয় সভাপতি কাউসার আলম সোহেল জানান- আমি সাংগঠনিক কাজের সুবাদে সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। কোথাও এতো সুন্দর বাহারি ঘুড়ি দেখিনি। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে বিমান ঘুড়িটি। এছাড়া খেলা-ধুলার মত ঘুড়ি উড়ানোর শখও মানুষের মনকে সতজে রাখতে যথেষ্ট সহায়ক বলে আমি মনে করি।
সূত্র : কুমিল্লার কাগজ।
Leave a Reply