1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে রাগবি খেলার পথ চলা

  • প্রকাশকালঃ শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
  • ২১৭ জন পড়েছেন

রাগবি খেলোড়ার


মো. সুমন :

রাগবি খেলা বহির্বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রচার এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে খেলাটি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। রাগবি খেলার ইতিহাস সম্পর্কে যতদূর জানা যায়, ১৮২৩ সালে যুক্তরাজ্যের মিডল্যান্ড এলাকার রাগবি স্কুলে ফুটবল খেলা চলাকালীন উইলিয়াম ওয়বে এলিস নামের এক শিক্ষার্থী পায়ের বদলে হাত দিয়ে বল ধরে বিপক্ষের সীমার দিকে ছুঁটতে থাকে। এই ঘটনাকে রাগবি খেলার উৎস বলা হয়। আর ওই স্কুলের নাম অনুসারে এই খেলার নাম দেওয় হয় রাগবি।

রাগবি বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা। ১৮৪৬ সালে এই খেলা স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৮০ সালের মধ্যে সারা ইংল্যান্ডে রাগবি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১৮৭১ সালে প্রথম আন্তজার্তিক রাগবি প্রতিযোগিতা শুরু হয় ইংল্যান্ড ও সু্ইজারল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে। ১৯৫৪ সাল থেকে রাগবি বিশ্বকাপ শুরু হয়। প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় এই বিশ্বকাপ। আসছে ২০১৯ সালে জাপানে হবে রাগবি ওয়ার্ল্ডকাপ। এ খেলার সর্বোচ্চ সংস্থার নাম ওয়ার্ল্ড রাগবি বোর্ড (ডব্লিউআরবি), যা ১৮৮৬ সালে গঠিত হয়।

২০০৬ সালে বাংলাদেশে রাগবির প্রচলন শুরু হয়। সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজর ছাত্রদের নিয়ে বাংলাদেশে এই খেলার সূচনা। ১০০ জন ছাত্র রাগবি খেলার নিয়ম কানুন শেখে ও তারদেরকে নিয়েই প্রথম টুনামেন্ট করা হয়, যার নাম দেওয়া হয় উন্মুক্ত রাগবি টুর্নামেন্ট-২০০৬।

২০১২ সালে বাংলাদেশ রাগবি এসোশিয়সনকে ফেডারেশন হিসাবে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং ২০১৩ সালে বাংলাদেশ অলিম্পক এসোশিয়াসন রাগবিকে অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৩ সালে রাগবি বাংলাদেশ গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়।

২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজে (মোহাম্মদপুর) কোর্সেস প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন ইউনিয়ন। রাগবি যেকোনো মাঠে যেকোনো ঋতুতে খেলা যায়। রোদ, বৃষ্টি, কাদাযুক্ত মাঠ, বালুর মাঠ, ঘাসের মাঠ যেকোনো মাঠে খেলা যায়।

প্রতি বছর নানা ধরনের কোচিং প্রগ্রাম হয়ে থাকে বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন ইউনিয়নে। তাছাড়া প্রতি বছর ১৫ হতে ১৬ টি টুনামেন্ট হয়ে থাকে যেমন- জাতীয় রাগবি (পুরুষ-মহিলা), স্বাধীনতা দিবস কাপ, ফেডারেশন কাপ, স্কুল রাগবি (ছেলে-মেয়ে), কলেজ রাগবি(ছেলে-মেয়ে), মিনি রাগবি,অনূর্ধ্ব-১০, ১২, ১৬, ১৮ টুনামেন্ট হয়ে থাকে। এছাড়াও বিজয় দিবস কাপ, বৈশাখী রাগবি ইত্যাদি টুনামেন্ট হয়ে থাকে।

২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ ট্যালেন্ট হান্ট হয় ১৭টি জেলায়। তা পর ১৭টি জেলা থেকে ভাল ভাল খেলার নিয়ে ঢাকাতে আবার এক মাসের ক্যাম্প করা হয় ৪০ জন খেলোয়াড় নিয়ে। তার ফল সরুপ ২০১৭ সালে জাতীয় রাগবি প্রতিযোগিতায় ১৯টি জেলা দল অংশগ্রহণ করে। ২০১৮ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিদপ্তর অধীনে ১৫টি জেলায় রাগবি ক্যাম্প হবে।

রাগবি দুদলের খেলা। প্রত্যেক দলে ১৫ জন করে খেলোয়াড় থাকে। খেলার সময় উভয় দলের খেলোয়াড়দের মূল উদ্দেশ্য থাকে ট্রাই করা এবং গোল করা ।ট্রাই হলে বিপক্ষ দলের ইনগোলে বল মাটি স্পর্শ করানো এবং গোল হল দু গোল পোস্টের মধ্যে এবং ক্রস বারের উপর দিয়ে বল পাঠানো।

মূলত গোলের খেলা হলেও এখানে পয়েন্টের হিসাব আছে। ট্রাই হলে পাঁচ পয়েন্ট, গোল কিক থেকে গোল হলে দুই পয়েন্টে, ড্রোপ কিক ও পেনাল্টি কিক থেকে গোল হলে তিন পয়েন্টে হয়। রাগবি খেলার সময় বল হাতে নিয়ে দৌড়াতে হয় আর পাস দিলে পিছনে দিতে হবে। শুধু মাত্র কিক করে সামনে দেওয় যাওয়া। যে দলের পয়েন্টে নিদিষ্ট সময় খেলার পর বেশি থাকে সে দল জয়ী হয়।

রাগবি খেলার ফরমেটগুলো: ৭ সাইড, ১০ সাইড, ১৫ সাইড, বিচ রাগবি, টার্চ রাগবি, ট্যাগ রাগবি ও হুইল চেয়ার রাগবি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০১৩ সাল থেকে রাগবি খেলার প্রচলন শুরু হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আর্মিতে আন্তঃইউনিট ও ডিভিশন খেলা হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে আন্তঃডিভিশনে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ক্যান্টরম্যান্ট (৩৩পদাতিক ডিভিশন), রানাপ আপ হয় লগ এরিয়া। সেরা খেলোয়াড় হন নাদিম মাহামুদ ও পরিতোষ চাকমা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে রাগবি খেলাটা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাগবি টিমে বর্তমানে ৬০ খেলোয়াড় আছেন ।

তার ধারাবাহিকতায় বিজিবি ও আনসার বাহিনী রাগবি খেলার ব্যাপারে রাজি হয়েছে। আশা করা যায়, ২০১৮ সাল থেকে বিজিবি ও আনসার রাগবি খেলবে। ২০১৮ সাল থেকে বিজিবি তাদের ট্রনিংয়ের অংশ হিসেবে রাগবি রাখেছে তাদের ট্রনিং সেন্টারে।

বাংলাদেশ রাগবি জাতীয় দল গত তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাগবি খেলে আসছে। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ২০১৫ সালে ভারতের চেন্নাইয়ে। প্রথম জয় লাভ করে নেপালের বিপক্ষে ৩৫-০০ পয়েন্ট। ওই টুর্নামেন্টে ১৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দশম অবস্থান অধিকার করে।

এরপর ২০১৬ সালে ভারতের চেন্নাইয়ে সিরিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে পরাজিত করে বাংলাদেশ রাগবি। মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য থাইল্যান্ডের পরাজিত হয় পরাজিত বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে দোহা কাতারে নেপালকে ৬৫-০০ পয়েন্টে পরাজিত করে বাংলাদেশ। এই টুনামেন্টে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট করে ব্যবধানে জয়লাভ করে।

বাংলাদেশ বল গুফে রানাপেআপ হয়। প্রতি টি টুনামেন্ট বাংলাদেশের খেলোয়াড় নাদিম মাহমুদ স্কোরে দিক থেকে ১ থেকে ৪ মধ্যে থাকে। কাতারে স্কোরে দিক দিয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল নামিদ মাহামুদ। ২০১৬ সালে স্কোর দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল নাদিম।

বাংলাদেশ রাগবি জাতীয় দলে গত বছর বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দূতাবাসের বিদেশিদের সঙ্গে একটারোগবি প্রতীতি ম্যাচ অংশগ্রহণ করে থাকে। ঢাকাতে সেখানে ২১-১৯ পয়েন্ট জয় লাভ করে বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরব অর্জন করেন নাদিম মাহামুদ।

বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো আন্তর্জাতিক রাগবি টুনামেন্ট করতে যাচ্ছে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক টুনামেন্ট করবে। এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ রাগবি জাতীয় দল ইন্দোনেশিয়ার এশিয়া রাগবি সেভেনস ট্রফি খেলতে যাবে। প্রায় ১৬টি দেশ ওই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করবে।

এশিয়রা রাগবি ফুটবল এসোশিয়ানের অন্তর্ভুক্ত মোট ৩৩টি দেশ রাগবি খেলে তার মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান ২৫তম। সরকার ও সংশ্লিষ্ট ক্রীড়ানুরাগী প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে আরেকটু সুদৃষ্টি দিলে বাংলাদেশ রাগবি দলকে আরও অনেক দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

লেখক : বাংলাদেশ জাতীয় রাগবি দলের কোচ।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম