1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন
১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় লাশ দাফনে বাঁধা কী বার্তা দিচ্ছে ?

  • প্রকাশকালঃ রবিবার, ৩১ মে, ২০২০
  • ৩৬৯ জন পড়েছেন

এম এস দোহা :

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্লোগান বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে মনে হয় করোনা আক্রান্ত হওয়াটাই বড় ধরনের অপরাধ। অমানবিক, দুঃক্ষজনক ও আনাকাঙ্খিত এসব ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অর্থ এই নয় যে, আমরা মানবিক ও সামাজিক অন্যান্য বিষয়গুলো বিসর্জন দিব। কারণ অদৃশ্য এমনসব সামাজিক কর্মকান্ড আছে, যা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন রাষ্ট্রিয়ভাবেও হচ্ছে আদান প্রদান। সোস্যাল ডিসটেন্স শব্দটি পশ্চ্যাতের জন্য যথাযথ হলেও বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে শারীরিক দূরত্ব বজায় শব্দটি শ্রেয়। তা এখন আমাদের উপলদ্বিতে এসেছে। জাতীসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মৃত্যুর পর করোনার রোগীর দেহে উপসর্গ থাকে না। তাহলে করোনা রোগীর মৃত দেহ নিয়ে এতো অনাকাঙ্খিত প্রেক্ষাপটের কেন ?

গত ২৮শে রাতে করোনা আক্রান্ত লাকসামের শ্রীয়াং গ্রামের হেদায়ত উল্লাহ’র লাশ দাফনে বাঁধার ঘটনা এখন জাতীয়ভাবেও আলোচিত। মরহুম হেদায়েত গ্রামে প্রচুর দান খয়রাত করতেন। কিছু দিন পূর্বে তিন হাজার লোকের মেজবানী খাইয়েছেন। অথচ মৃত্যুর পরে গ্রামবাসী লাশ দাফনে রাস্তায় গাছের গুড়ি পেলে ব্যারিকেট দেয়। সামাজিক ও মানষিকভাবে হয়রানী করে মরহুমের পরিবারের সদস্যদের।

উল্লেখ্য হেদায়ত উল্লাহ’র সাথে আমার পরিচয় বাতাখালী হাফেজিয়া মাদ্রাসার মাঠে। আমার অদূরবর্তী পার্শ্ববতী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ভদ্রলোক ধার্মিক ও দানশীল। বাড়ী থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে মাদ্রাসায় নেমেছিলেন সহযোগীতার জন্য। সেই থেকে আমি তার ভক্ত। যদিও পরবর্তীতে তার সাথে আর কথা হয় নাই। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সাধারণত আমাদের মাদ্রাসার প্রতি যারা সুনজর রাখেন, তাদেরকে আমি অন্তর থেকে ভালবাসি। কেউ সহযোগিতা চাইলে সুযোগ থাকলে নিরাশ করিনা। আর যারা বিরোধিতা করে তাদের রাখি‘ লাল তালিকায়’। আর যাইহোক এরা ইসলামের সেবক নয়। এদের শক্ত হাতে দমন করতে কখনোই ছাড় দেইনি, ভবিষ্যতেও দেব না।

অনুজ দলিলুর রহমানের মানিক ও পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেনের ফেইসবুক থেকে জানলাম গুটিকয়েক ‘সুদি’ হেদায়ত উল্লাহ’র জানাজার প্রতিবন্ধকতার নেপথ্য নায়ক। অবশ্যই এদের চিহ্নিত ও নাম প্রকাশের বিষয়টি মানিকের কাছে আশা করেছিলাম। এদের মুখোশ উন্মোচন না করলে পার পেয়ে যাবে। দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বার্থেই এটা করা জরুরী। কারণ এমনিতেই অমানবিকতায় সয়লাভ হয়েগেছে সমাজ ব্যবস্থা। ভাল লোকেরা হাত গুটিয়ে ঢুকে গেছে ঘরে। সমাজে এখন যারা নেতৃত্বে, তাদের অধিকাংশই নীতি আদর্শ ও চরিত্রহীন। দেশের অধিকাংশ মসজিদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ পদ দখল করেছে সুদি, জেনাখোর, চোর, দূর্নীতিবাজ ও টাউট বাটপার প্রকৃতির লোকেরা। তাইতো ভেঙ্গে পড়েছে আমাদের সামাজিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।

করোনা আক্রান্ত রোগীর পরিবারের সদস্যদের ভোগান্তি, মানসিক যন্ত্রনা, সামাজিক অবজ্ঞা, অবহেলা কত প্রকার ও কি কি তা ভূক্তভোগী হিসেবে হেদায়েত উল্লাহ পরিবারের সদস্যরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। অনেক করুন, পীড়াদায়ক ও অমানবিক চিত্র ওঠে এসেছে সোস্যাল মিডিয়ায়। এনিয়ে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। কারণ এ ধরনের শত শত অমানবিক ঘটনা করোনাকালীন বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কের তিলক।

বিষয়টি উপলব্ধি করেই করোনা মৃত দেহ ও রোগীকে মানবিক সহযোগিতা-সমবেদনা প্রদানের জন্য জনগনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য করোনা বিশ্বের চলমান সমস্যা। তাই আক্রান্ত হওয়াটা অপরাধ নয়। অথচ কাঁশি দিতে দেখলেই সামাজিকভাবে বয়কট, অবজ্ঞা, অবহেলার প্রবণতা দৃশ্যমান। সেই সাথে সর্দি-জ্বরের রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণে রয়েছে সমূহ সংকট। হাসপাতালগুলো এ উপসর্গের রোগী দেখলে আতঙ্কে ভোগেন। কারণ ইতিমধ্যেই ডাক্তার, নার্স, পুলিশ ও সাংবাদিকদের অনেকই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত। চিকিৎসা অভাবে রোগী মারা যাওয়ার পরবর্তীতে জানা যায় তিনি আদৌ আক্তান্ত ছিলেন না। সামাজিক অবহেলা ও অবজ্ঞাসহ এসব কারণে অনেকের করোনা উপসর্গ থাকলেও তা স্বীকার করতে নারাজ।

এ প্রসঙ্গে গত ৮এপ্রিল শেরপুর সদর হাসপাতালে দুই করোনা আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে তিন এমপির মধ্যে বিষয়টি উল্লেখ করা দরকার। নিজ নির্বাচনী এলাকার হাসপাতালে তারা এসব রোগী ভর্তি করতে নারাজ। যা পত্র-পত্রিকার শিরোনাম হয়। এঘটনা থেকে সহজে অনুমেয় দেশব্যাপী করোনা আক্রান্ত ও সম্ভাব্য রোগীদের অবহেলা, অবজ্ঞার বিষয়টি। এমপি’দের যদি করোনা রোগী নিয়ে এই মনমানসিকতা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মনোভাব বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা। গ্রামগুলোতে লকডাউনের নামে বাঁশের স্থায়ী বেড়া দিয়ে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে তা ভয়াবহ। জরুরী প্রয়োজনে এম্ব্যুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের বিষয়টিও কারো মাথায় নেই। ঈদ পরবর্তী সময়ে লক ডাউন প্রত্যাহরের সাথে সাথেই রোগী ও মৃত্যুর হার বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। সামনে হয়তো আরো অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা অপেক্ষারত।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনায় বাসাবাড়িতে ধর্মীয় কর্মকান্ড বেড়েছে সত্য। কিন্তু সামাজিক কর্মকান্ড এই ধর্মীয় বিধিবিধান কতিপয় ক্ষেত্রে হচ্ছে উপেক্ষিত। জনগনকে জিম্মি করে অহেতুক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, রিলিফ চুরি, চাঁদাবাজী অবশ্যই গর্হিত অপরাধ। এখন এর সাথে যোগ হয়েছে সর্দি-কাশি ও করোনা রোগীর প্রতি ঘৃণা, অবহেলা ও অমানবিক আচরণ। যা দেখলে ও পর্যালোচনা করলে প্রশ্ন জাগে এটাইকি আমাদের সামাজিক রীতিনীতি? এটাই কি ইসলামী মূল্যবোধ? পত্রপত্রিকায় করোনা রোগী ও লাকাসামের হেদায়ত উল্লাহ’র লাশ দাফনে বাঁধার নেতিবাচক ঘটনা আমাদের কি ম্যাসেজ দিচ্ছে?

লেখক : উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক নতুন সময়।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম