1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৮ অপরাহ্ন
১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরিচ্ছন্নতার প্রতি নবীজি যেমন গুরুত্ব দিতেন

  • প্রকাশকালঃ শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০
  • ৪৪২ জন পড়েছেন

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী :

ইসলামের দৃষ্টিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ। যে দৈহিকভাবে পবিত্র থাকে না তার মনও তাতে প্রভাবিত হয়।

আধুনিক বিজ্ঞানও এ কথা স্বীকার করেছে, যে মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে মানসিক দিক থেকেও সে অধিকতর সুস্থ থাকে। এমনকি শারীরিক সুস্থতার জন্যও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।

ইসলামে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সামগ্রিক। পরিচ্ছন্নতা বলতে শরীর ও মনের পরিচ্ছন্নতাকে বোঝানো হয়ে থাকে। একজন মুসলিমের পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন দিক খেয়াল রাখতে হয়।

মূত্র ত্যাগের পর ঢিলা-কুলুখ ও পানি ব্যবহার করে ভালোমতো পবিত্র হওয়া পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার অন্যতম দিক।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একবার নবীজি (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মন্তব্য করলেন: ‘এই কবরবাসীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে, অথচ তাদের কোনো বড় কাজের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোগলখোরি করত, অন্যজন মূত্র ত্যাগের পর পুরোপুরি পবিত্র হতো না। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন মহান আল্লাহ। মদিনার নিকটবর্তী কোবা এলাকার লোকজনের প্রশংসা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা তওবা, আয়াত : ১০৮)

কোবাবাসীদের এত প্রশংসা করার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হল তারা পেশাব-পায়খার পর ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে পানিও ব্যবহার করত।

মহান আল্লাহ আরও এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের। (সূরা বাকারা, আয়াত : ২২২)

অপরিচ্ছন্নতার দুয়ার বন্ধ করে দেয় অজু। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তুলনা নেই এ অজুর। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য অজু করতে হয়। এতে করে তার শরীরে কি আর কোনো ময়লা থাকতে পারে?

অজুর মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন হয়ে ঘুমালে তার ফজিলত দেখুন হাদিসে- নবীজি (সা.) বলেন, যে কোনো মুসলমান যখন পবিত্রতার সঙ্গে আল্লাহর নামে ঘুমায়, এরপর সে রাতে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখেরাতের কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে তা দিয়ে দেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪৪)

সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা দ্বীনদার মানুষদের থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে মেসওয়াক। এ মেসওয়াক হতে পারে পরিচ্ছন্নতার অন্যতম মাধ্যম। কোথাও যেতে হলে কিংবা কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে হলে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সচেতন ব্যক্তি মাত্রই এর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তাহলে নিজেও মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবে। অন্যরাও নিষ্কৃতি পাবে তার মুখের দুর্গন্ধ থেকে। এ জন্য কোথাও যাওয়ার আগে কিংবা কারও সঙ্গে দেখা করার আগে মেসওয়াকের প্রতি গুরুত্ব দেয়া খুবই দরকার।

নবীজি (সা.) বলেছেন, মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রতা আর প্রভুর সন্তুষ্টির মাধ্যম। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫)

জুমার দিনের গোসলও খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার দিন জুমার নামাজে অনেক লোক একত্রিত হয়। অনেক লোকের আবহে সৃষ্টি হতে পারে দুর্গন্ধের। তাই নবীজি (সা.) বলেন, জুমার দিন গোসল করা প্রতিটি বালেগ পুরুষের জন্য আবশ্যক। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৫৮)

বাহ্যিক বেশভূষাকে অপছন্দের দৃষ্টিতে দেখে না ইসলাম। বাহ্যিক-বেশভূষা বরং ইসলামে কাঙ্খিত বস্তু। একদিন নবীজি (সা.) অহংকারের ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

সাহাবায়ে কেরামের মনে সংশয়-তাহলে সুন্দর পোশাক সুন্দর জুতা কি অহংকারের শামিল? তাদের একজন আল্লাহর রাসূলকে প্রশ্ন করলেন- মানুষ তো চায় তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক। (এটাও কি অহংকার?)

রাসূল (সা.) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। অহংকার হল সত্য অগ্রাহ্য করা এবং মানুষকে তুচ্ছ মনে করা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯১)

সাহাবি মালেক ইবনে নাজলা (রা.)-এর ঘটনাটি এ ব্যাপারে খুবই শিক্ষণীয়। তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন, একদিন আমি মসজিদে রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে বসে ছিলাম। তিনি দেখলেন আমার গায়ে ছেঁড়াফাটা কাপড়। তখন তিনি জানতে চাইলেন : তোমার কি অর্থসম্পদ আছে?

আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সব রকম সম্পদই আমার আছে। নবীজি (সা.) বললেন, আল্লাহ যখন তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন তাই এর চিহ্ন যেন তোমার ওপর প্রকাশ পায়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫২২৩)

চুলের প্রতিও নিতে হবে যত্ম। নবীজি (সা.) নিজেও চুল পরিপাটি করে রাখতেন। একবার নবীজির সঙ্গে কিছু মানুষ দেখা করতে এল। নবীজি তাদের উদ্দেশে বের হওয়ার সময় একটি পানির পাত্রের মধ্যে তাকিয়ে নিজের চুল-দাড়ি পরিপাটি করে নিলেন। …

নবীজি বললেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। যখন কেউ তার ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাতে যাই, সে যেন নিজেকে পরিপাটি করে নেয়। (আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাহ, হাদিস : ১৭৩)

এক হাদিসে নবীজি এমনও বলেছেন, যার চুল আছে সে যেন চুলের যত্ন নেয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৬৫)

জাবের (রা.)-এর বর্ণনামতে নবীজি (সা.) এক ব্যক্তির চুল উস্কুখুস্কু দেখে বললেন, তার কি এমন কিছু নেই যার দ্বারা সে তার চুল আঁচড়িয়ে পরিপাটি রাখতে পারে।

নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা, বাহুর নিচের চুল উপড়ানো এমনকি গুপ্তাঙ্গের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করাসহ কোনোটির প্রতি কম গুরুত্ব দেয়নি ইসলাম।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, দশটি বিষয় ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত : গোঁফ কাটা, দাড়ি লম্বা রাখা, মেসওয়াক করা, নাকে পানি দেয়া, নখ কাটা, চামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো ধোয়া, বগলের নিচের চুল তুলে ফেলা, নাভির নিচের চুল মুণ্ডানো, (মলমূত্র ত্যাগের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।

বর্ণনাকারী বলেন, দশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছি, সম্ভবত কুলি করা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৫৭)

এ ছাড়াও আবাস, ঘর-বাড়ি, পরিবেশ-পরিপার্শ্ব পরিচ্ছন্ন রাখা। খাদ্য ও পানীয়কে দূষণমুক্ত রাখতে ঢেকে রাখা। খাবার গ্রহণের আগে হাত ধোয়ার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোগ করা ইসলামের নির্দেশ।

তাই আসুন ইসলামের এই অনবদ্য আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজে সুস্থ থাকি এবং অপরকে সুস্থ রাখি।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত,৪৩ নবাব সলিমুল্লাহ রোড, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম