1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৩ অপরাহ্ন
৪ঠা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষুধার্তকে অন্ন দান অনেক সওয়াবের কাজ

  • প্রকাশকালঃ রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০
  • ২৪৪ জন পড়েছেন

ফয়সল আহমদ জালালী : সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। প্রাণী জগতের নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে। বিবেক-বুদ্ধির জোরেই মানবজাতির এ শ্রেষ্ঠত্ব।

আবার মানুষ যে দুর্বল ও অসহায়, তা আবারও প্রমাণিত হল। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস-করোনার দ্বারা গোটা মানব জাতির জীবন আজ হুমকির মুখে। কে কখন আক্রান্ত হয়, সেই চিন্তায় বিশ্ব মানব তটস্থ।

দৈনিক হাজার হাজার মানব সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ আসছে সংবাদ মাধ্যমে। সুপার পাওয়ার ও স্বাস্থ্যসেবায় উন্নত তকমাধারীদের কাউকেই ভাইরাস তোয়াক্কা করে না।

আস্তিক-নাস্তিক, মুসলিম-অমুসলিম, পাপী-পাপমুক্ত কাউকেই সে চিনে না। এ ব্যাপারে যারা ইতিমধ্যে গলাবাজি করেছিল। তা ইসলামের আলোকে যথাযথ ছিল না।

বাস্তবেও যে তা সত্য নয়, তা প্রমাণিত হল। এ মহামারী থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে বিশ্বে লকডাউন নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। ‘জান বাঁচানো ফরজ’ বলে সমাজে প্রচলিত বচনটি অমূলক নয়। এটি কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত।

এখানে এ বিষয়ে আলোচনা উদ্দেশ্য নয়। এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটকালে আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা আমার লক্ষ্য।

অভাবগ্রস্তকে আহার দান

দেশ ও সমাজ অভাব-অনটনের সম্মুখীন হলে স্বচ্ছল মানুষেদের কর্তব্য হল অসহায় অস্বচ্ছলদের প্রতি দানের হাত প্রসারিত করা।

মহান আল্লাহ সেই সব মুমিনের প্রশংসা করেছেন যারা দুর্দিনে অভাবি মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে আর বিপদের কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেয়।

ইরশাদ হচ্ছে- দুর্ভিক্ষের দিন আহার্য দান,ইয়াতিম আত্মীয় অথবা দারিদ্র্য-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে, সর্বোপরি সে অন্তর্ভুক্ত হয় এমন মুমিনদের যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের ও দয়া-দাক্ষিণ্যের। তারাই সৌভাগ্যশালী। (সূরা,বালাদ-,আয়াত,১৪-১৮)

অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে উৎসাহ না দিয়ে এবং ইয়াতিমকে অবমূল্যায়ন করে যারা সম্পদের মোহে বিভোর থাকে আল্লাহ তা’আলা তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।

ইরশাদ হচ্ছে- না, কখনও নয়। বরং তোমরা ইয়াতিমকে সম্মান কর না,অভাবগ্রস্তদেরকে খাদ্য দানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না, উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে খেয়ে ফেল, ধনসম্পদ অতিশয় ভালোবাস,তা সঙ্গত নয়। (সূরা,ফাজর আয়াত,১৭-২১)

অভাবগ্রস্তকে খাবার না দেয়ায় জাহান্নাম

শেষ বিচারের দিন একদল মানুষকে আল্লাহ্তায়ালা ‘সাকার’ নামক জাহান্নামে দেখে তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন,তোমরা এখানে কেন। তারা এর উত্তরে যা বলবে আল-কুরআনের ভাষায় তা শুনুন।

ইরশাদ হচ্ছে- তোমাদেরকে কিসে সাকার-এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে,আমরা মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না।(সূরা,মুদ্দাসসির,আয়াত,৪২-৪৪)

ফেরেশতাদের প্রতি মহান আল্লাহ কিয়ামত দিবসে যেই নির্দেশনা দিবেন তা যে কত কঠোর হবে। আসুন! তা আল্লাহর কালাম থেকেই জেনে নেই।

‘ধর তাকে,তার গলদেশে বেঁড়ি পরিয়ে দাও, অতঃপর তাকে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে ।পুনরায় তাকে শৃঙ্খলিত কর সত্তর হাত দীর্ঘ শৃংখলে । সে তো মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল না এবং অভাবগ্রস্তকে অন্ন দানে উৎসাহিত করত না।’ (সূরা, হাক্কা, আয়াত,৩০-৩৪)

প্রতিবেশীকে গুরুত্ব দেয়া

আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ সা, প্রতিবেশীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলতেন,জিবরাঈল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এ পরিমাণ সতর্ক করতেন যে, আমার মনে হতো এক সময় তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার ঘোষণা করে দেবেন।

তিনি তার এক বাণীতে হুঁশিয়ার করে বলেন। আল্লাহ ও পরকালে যার বিশ্বাস রয়েছ সে যেন প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।(সহীহ বুখারী ৬০১৯)

হজরত আনাস ইবন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- সেই ব্যক্তি আমার উপর বিশ্বাসই স্থাপন করেনি যে- তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত জেনেও সে খেয়ে-দেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে রাত যাপন করে।( তাবরানী আল মু’জামুল কাবীর) বিশেষজ্ঞদের মতে হাদীসটি সাহীহ।

সাহায্য দানে লৌকিকতা নয়

যেখানে অন্য কাউকে উৎসাহ দান উদ্দেশ্য হয় না সেখানে যে কোনো ধরনের দান-সদকায় গোপনীয়তা রক্ষা করা উত্তম। শুধু উত্তমই না অতি উত্তম।

নবী করীম (সা.) সাত শ্রেণির মানুষকে কিয়ামত দিবসে আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ সাত শ্রেণির অন্যতম হল-যে ব্যক্তি সদকা দানে এমনভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করে তার ডান হাতে কি দিল বাম হাত তা বুঝতে পারে না (সহীহ বুখারী)

গ্রহীতা থেকে বিনিময় প্রত্যাশা নয়

সাধারণ দান হোক আর সদকা হোক, এর বিনিময় প্রাপ্তি কেবল মহান আল্লাহর কাছে উদ্দেশ্য হতে হবে। গ্রহীতা থেকে প্রতিদান প্রত্যাশা করলে দানের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।

অনেকে উপহার দেয় এই উদ্দেশ্যে যে, পরবর্তীকালে তার কোনো অনুষ্ঠানে সমপরিমাণ বা এর চেয়ে বেশি পাবে।আল-কুরআনে এমন দানকে সুদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।(সূরা: রূম, আয়াত:৩৯)

সমাজের ব্যাপকসংখ্যক মানুষ দান করার পর গ্রহীতাদের কাছে দোয়া চায়। সেটিও কাম্য নয়। এটাও দানের বিনিময় চাওয়া। আল-কুরআনে সৎকর্মশীল জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে-খাবারের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত,ইয়াতিম ও বন্দিকে খাবার দান করে এবং বলে,কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার দান করি,আমরা তোমাদের নিকট হতে প্রতিদান চাই না,কৃতজ্ঞতাও নয়।(সূরা:দাহর,আয়াত:৮-৯)

তবে খাওয়া-দাওয়ার পর যদি মেহমান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো দোয়া করেন তাতে কোনো দোষ নেই।

রাসূলুল্লাহ সা.খাদ্যগ্রহণ শেষে কোনো কোনো সময় আপ্যায়নকারীকে জিজ্ঞেস করতেন, তোমার জন্য কোনো দোয়া করব। সে যা চাইত সেটি তার জন্য কল্যাণকর মনে করলে, সেই দোয় তিনি তার জন্য করে দিতেন।

গ্রহীতা কর্তৃক ‘জাযাকাল্লাহ’ বলা

‘জাযাকাল্লাহ খাইরা’ মানে আল্লাহ্ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ গ্রহীতার কর্তব্য। সে তা পালন না করলে সেটি তার অপরাধ।

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি অবশ্যই বৃদ্ধি করে দিবেন। হজরত উসামা ইবন যায়দ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,নবী করীম সা. বলেছেন- যার প্রতি কোনো সৎকর্ম করা হয় সে যদি কর্তার উদ্দেশে বলে- ‘জাযাকাল্লাহ খাইরা’ তা হলে সে উত্তমভাবে তার শুকরিয়া করল।(সুনানু তিরমিযী,২০৩৫)

গ্রহণকালে গ্রহীতার যে, কিছু বলতে হয় আমাদের সমাজে তার প্রচলন একেবারেই ভুলে যাওয়া হচ্ছে। আসুন! জাযাকাল্লাহ বলার সংস্কৃতি আমরা চালু করি।

লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস,দারুল উলুম মিরপুর ১৩,ঢাকা, লেখক-গবেষক ইসলামিক ফাউন্ডেশন

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম