1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা মহামারিতে পশুর হাটে মহামন্দা

  • প্রকাশকালঃ মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০
  • ২৬৯ জন পড়েছেন

নকশী বার্তা ডেস্ক : পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র তিন দিন। ফি বছর এই সময়ে রাজধানীর গরুর হাটগুলোতে তিল ধারনের ঠাঁই থাকে না। কিন্তু এবারের হিসাব অনেকটাই ভিন্ন। যেমন কম পশুর সংখ্যা। তেমনি নেই ক্রেতাও। রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরাও। অনেকেই বলছেন এ যেন মহামারিকালের পশুর হাটে মহামন্দা। কিন্তু এরপরেও যেসব ক্রেতা-ব্রিক্রেতা হাটে এসেছেন তাদের মধ্যে তেমন সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি।

মঙ্গলবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার হাটগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় আশানুরূপ ক্রেতা নেই। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না ব্যবসায়ীরা। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। ক্রেতাদের সঙ্গে শিশুরাও হাটে আসছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সড়ক, রেলপথ ও বাসাবাড়ির সামনে গরুর হাট বসেছে। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছর ঢাকা শহরের বাইরে পশুর হাট বসানোর নির্দেশনা দিয়েছিল ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। কিন্তু এই নির্দেশনা অমান্য ঢাকা মহানগরী পশুর হাট চলে এসেছে সড়ক ও রেলপথের পাশে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে অবাধে বেচা-কেনা ও ঘুরে বেড়ানোর কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে। জনস্বাস্থ্যবিদ মুস্তাক হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণে পশুর হাট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এবার রাজধানীতে পশুর হাট ইজারা না দিতে সুপারিশ করেছিল জাতীয় কারিগরি কমিটি। একই বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কোনো নির্দেশনা মানেনি।

রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় পশুর হাট বসানো হয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের দুই পাশে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন অলি-গলি ও সড়কপথে বসানো হয়েছে পশুর হাট। রেল ও যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অনেক অস্থায়ী হাটের গরু মানুষের বাসা-বাড়ির সামনের সড়কে রাখা হয়েছে। এতে এদিকে যেমন চলাচলের দুর্ভোগ ও অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কমলাপুর, মেরাদিয়া বাজার ও দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন এলাকায়। এসব এলাকার অস্থায়ী পশুর হাটের কোনো সীমানা নেই।

রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বেপারিরা ট্রাক ও নৌযান বোঝাই করে রাজধানীর পশুর হাটে আসছেন। কিন্তু হাটের মূল স্থান আগেই দখল হয়ে যাওয়া এখন বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসা-বাড়ি, সড়ক ও রেলপথের পাশের খালি জায়গায় বসানো হচ্ছে পশুর হাট।

সিটি কর্পোরেশন নির্দেশনা অনুযায়ী ২৮ জুলাই থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত অস্থায়ী পশুর হাট কার্যকর থাকবে। কিন্তু ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনে ২৭টি পশুর হাট ২০ জুলাই বসানো শুরু হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে অনেক বেপারি আগেভাগেই পশু নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছে। তাই ঢাকার আশপাশ জেলার অনেক বেপারি দেরিতে আসায় মূল হাটে জায়গা না পেয়ে হাটের আশপাশে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান বেপারিরা।

ঝিনাইদহের খামারি হাকিম মিয়া জানান, গতকালই তিনি গরু নিয়ে রাজধানীর কমলাপুরের গরুর হাটে এসেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি। করোনার কারণে গরু বেচা-কেনা নিয়ে ভাবনায় আছেন তিনি।

হাকিম মিয়ার মতো অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন। তবে ক্রেতা সংকটে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। বাবু সরকার নামের একজন বিক্রেতারা জানান, তিনি যে বিক্রি করার আশায় হাটে গরু এনেছেন সেই দামের ধারে কাছেই কেউ দামই বলেনি। সবাই বলছে বাজার এখনও জমেনি। আরেকজন বিক্রেতার অভিজ্ঞতা এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর চাহিদা বেশি। করোনাভাইরাসে কারণে এবছর মানুষের হাতে টাকা পয়সা কম। তাই যিনি আগে ৬০ হাজার দিয়ে গরু কিনেছেন এবার তিনি খুঁজছেন ৪০ হাজারের মধ্যে।

রাজধানীর আফতাবনগর হাটে দেখা গেল ক্রেতা সংকট আর দাম কমের এই অবস্থা। অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এই হাটে আসা খামারিদের। তারা জানান, হাটে পানির লাইন মাত্র একটা। তাও আবার মাঝে মাঝে পানি থাকে আবার মাঝে মাঝেই থাকে না। নেই কোনো টয়লেটের ব্যবস্থাও।

কুষ্টিয়া থেকে ১০টি গরু নিয়ে রাজধানীর কমলাপুর এসেছেন কেরামত আলী। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আজ দুপুরে এসে নেমেছি। একজন ক্রেতা এসে একটি গরুর দরদাম করেছেন। ৭০ হাজার পর্যন্ত বলেছেন। আমি এক লাখ টাকার কথা বলেছি। আর কোনো গ্রাহক এখনো আসেনি (সন্ধ্যা পর্যন্ত)।

তিনি বলেন, গতবছর এই হাটে প্রথমে ১০টি, পরে আরো পাঁচটি গরু এনে বিক্রি করেছিলাম। তাতে মোটামুটি ভালো একটা লাভ পেয়েছিলাম। এবারও কিছু লাভের আশায় খুব কষ্ট করে এখানে এসেছি। দেখি খোদা কী করেন?

আরেক ব্যাপারী আবদুল কাদের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে এসেছেন। তিনি ১৫টি ষাড় গরু এনেছেন এই কমলাপুর হাটে। এবার সারাদেশেই তার কাছে কোরবানির বাজার ভালো মনে হচ্ছে না। তারপরও তারা যেহেতু গরুর ব্যবসা করেন সে কারণে এবার ১৫টি গরু হাটে এনেছেন। তিনি বলেন, এবার এলাকায় গরুর হাটে বেচাকেনা নেই। মানুষের হাতে টাকা নেই। করোনার কারণে অনেকের চাকরি গেছে। চার মাস কোনো ব্যবসা নেই। অনেকে চালান ভেঙে বসে বসে খেয়েছে। ঢাকায় এসেছি কারণ এখানে অনেক বড় লোকের বাস। তারা কোরবানি দেবেই।

কুষ্টিয়া থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে কমলাপুর হাটে এসেছেন আব্দুস সোবহান নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, আমরা দু’জন মিলে পাঁচটি গরু নিয়ে এই হাটে এসেছি। প্রতিটি গরুর পেছনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা প্রতিদিন খরচ হচ্ছে। তবুও বিক্রির আশায় এখানেই থাকছি, রান্না করে খাচ্ছি।

তিনি বলেন, প্রতিবার এ সময় যেমন ক্রেতা আসে এবার তেমন ক্রেতাই আসতে শুরু করেনি। দু-একজন আসে গরু দেখে, দাম শুনে চলে যায়। গতবার যে মাপের গরু দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছি এবার সেই গরু এক লাখ টাকাও দাম বলছে না ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু এনেছি তাদের কপালে এবার চিন্তার ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে এসেছেন সাজ্জাত হোসেন। তিনি বলেন, এবার এখনও ক্রেতারা হাটে আসেননি। যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগই ছোট গরু খুঁজছেন। তুলনামূলক বড় গরুর দাম কেউ বলছেই না। ক্রেতাদের চাহিদা এবার ছোট গরু। আমরা আটটি গরু এনেছি মাঝারি সাইজের। কিন্তু খুবই চিন্তায় আছি এবার আদৌ কি আমাদের সব গরু বিক্রি হবে? আমরা চারজন, সবার প্রতিদিনের খরচ। আবার প্রতি গরুর পেছনে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ। সব মিলিয়ে এবার ভয় পাচ্ছি।

কোরবানির গরু কেনার উদ্দেশে রাজধানীর বাসাবো থেকে এসেছেন মকিদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেড় লাখ টাকার মধ্যে গরু কিনি। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে ব্যবসায়িক অবস্থা খারাপ। যেহেতু কোরবানি দিতেই হবে, তাই তুলনামূলক কম দামের গরু কিনতে চাই। এ বছর বাজেট ৬০ থেকে ৮০ হাজার। আমার মতো অধিকাংশ মানুষই এবার ছোট গরু কিনবে।’

রাজধানীর গোপীবাগ রেললাইনের পাশে ১৫টি গরু নিয়ে অবস্থান করছেন ফরিদপুরের বেপারি ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, ভাই আমরা জানতাম হাট শুরু হবে ঈদের পাঁচদিন আগে। তাই ৭ দিন হাতে নিয়ে গত রোববার কমলাপুর হাটে আসি। কিন্তু হাটের ভেতরে কোন জায়গা নেই। তাই হাট ব্যবস্থাপনার লোকেরা রেললাইনের পাশে জায়গা দিয়েছে। ১৫টি গরুর জন্য ১৫ হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছে। আমরা তো ইচ্ছে করে এখানে বসি না।

গোপীবাগ ওয়াসার পাম্প স্টেশনের পাশের সড়কের ৩৫টি গরুটি নেয় ক্রেতার অপেক্ষা করছেন টাইঙ্গাইলের বেপারি স্বপন মিয়া। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের ভানবাসি বেপারিদের কারণে হাটের ভেতরে জায়গা পাওয়া যায় না। বন্যার কারণে তারা আগে এসে হাটের ভেতরের জায়গা দখল করে নিয়েছে। তাই আমরা এখন রাস্তায় বসতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কমলাপুর হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও ডিএসসিসি’র ৮ নাম্বার ওয়ার্ড কমিশনার সুলতার মিয়া বলেন, হাটের ভিতরে জায়গা না হওয়ায় অনেক বেপারি রেললাইন ও সড়কে উপর গরু রাখেছে। হাটের ভেতরে জায়গা হলে তা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া হাটের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানেটাইজারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বলেন, আমাদের হাটে ২০ হাজারের মতো গরু রাখার জায়গা আছে। এখন কেবল ৭-৮ হাজার গরু এসেছে। গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম কিছুটা কম। আমরা আসা করছি সামনের কয়েকটা দিনে বেচা-কেনা বাড়বে। আমাদের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা যারা আসছেন আমরা তাদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচল করার জন্য বার বার তাগাদা দিচ্ছি। এছাড়া যেসব ক্রেতা বা বিক্রেতা মাস্ক ছাড়া আসছেন তাদের মাস্কও দিয়ে দিচ্ছি আমরা।

রাজধানীর উত্তরার ১৭ সেক্টরের বন্দাবন এলাকায় পশুর হাটটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পরিচালিত। কিন্তু এই হাটের সীমানা ছড়িয়ে পড়েছে প্রধান সড়কে। বিভিন্ন বাসা-বাড়ির সামনের সড়কে রাখা হয়েছে হাটের পশু। ময়ময়সিংহ, শেরপুর ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় বেপারিরা গরু নিয়ে এই হাটে এসেছেন। এলাকাটি আবাসিক হওয়ায় মূল হাটের জায়গা খুব কম। তাই বিভিন্ন বাসা-বাড়ির সামনের সড়কে গরু নিয়ে অবস্থান করছেন বেপারিরা। একই অবস্থা কাওলা ও ভাটারা সাইদনগর পশুর হাটের। হাটের বেশির ভাগ পশু এলাকার বিভিন্ন অলিগলি ও সড়কে উপর রাখা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

দক্ষিণখানের কাওলা এলাকায় আকতার হোসেন এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ‘কোরবানির পশু আর হাটে থাকে না। সব এখন রাস্তায় চলে এসেছে। করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা হাটের সীমানা পর্যন্ত নির্ধারণ নেই। ইজারাদারের ইচ্ছেমতো যেখানে-সেখানে পশু রাখা হচ্ছে বিক্রয়ের জন্য। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পশু ও ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধে এলাকায় থাকা কষ্টকর হয়ে পরছে বলে জানান তিনি।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ইজারাদারদের আমাদের শর্তাবলী যাতে কঠোরভাবে পালন করা হয় সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাই, সে সব শর্তাবলী প্রতিপালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে আমরা হাটগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব। কেউ ইজারার শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

মঙ্গলবার রাজধানীর ভাটারা থানার সাঈদ নগরে অবস্থিত কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট পরিদর্শন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসিতে প্রতি বছর ১০ থেকে ১১টা হাট বসে। এবারে করোনা মোকাবিলার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি ঢাকা শহরের বাইরে কিছু জায়গায় হাট বসানোর জন্য। বর্তমানে একটি স্থায়ী হাট গাবতলীতে এবং পাঁচটি অস্থায়ী হাট শহরের বাইরের দিকে খোলামেলা জায়গায় বসানো হয়েছে। এছাড়া হাটে না গিয়ে অনলাইন থেকে কোরবানি পশু কেনা, কোরবানি দেয়া, মাংস প্রস্তুত করা এমনকি বাসায় মাংস পৌঁছে দেয়ার জন্য ডিজিটাল হাটও বসানো হয়েছে। এবছর মহামারির মধ্যে কোরবানি। প্রতি বছর কোরবানি পশু কিনতে আমরা হাটে আসি। হাটে আসাটাই উৎসবের একটা অংশ। কিন্তু এবার বিশ্বব্যাপী মহামারি এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি এটি মোকাবিলা করার।

তিনি বলেন, হাট ইজারা দিয়ে ডিএনসিসি গত বছর ২১ কোটি টাকা পেয়েছিল, হাট কমানোর কারণে এবার অনেক কম টাকা পেয়েছি। হাট পরিদর্শনের জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি মনিটরিং টিম করা হয়েছে। তারা মনিটরিংয়ের জন্য প্রত্যেকটা হাটে যাচ্ছেন। হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কিনা তা মনিটরিং করছেন। ইজারাদাররাও মাস্ক নিয়ে এসেছেন, যাতে কেউ মাস্ক নিয়ে না এলে তাদের দিতে পারে। এটি মেনে চলা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। বারবার মাইকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে বলা হচ্ছে। সচেতন করা হচ্ছে বয়স্ক, শিশু, অসুস্থরা যাতে হাটে না আসেন। হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিটি হাটে একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবাই যেন মেনে চলে। মহামারির মধ্যেই এবার ঈদ হচ্ছে। বেঁচে থাকলে আরও অনেক কোরবানির ঈদ করতে পারবো। কিন্তু এবারে যারা হাটে আসবেন মেহেরবানি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। আমরা কেবল সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে বিধিগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মেনে চলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

কোরবানির স্থান প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, রাজধানীর বছিলায় দুই হাজার পশু কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিএনসিসি থেকে ২৫৬টি স্থানে কোরবানি দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো এসব স্থানে পশু কোরবানি দিন। মহামারি ও কোরবানি মাথায় রেখে নিজ নিজ দায়িত্বে শহর পরিষ্কার রাখুন।

রাজধানী সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী গরুর হাট। কিন্তু এবার কোরবানি ঈদে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও ক্রেতা নেই বলে জানান বেপারিরা। ঈদের আর মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও হাটের তেমন বেচা-কেনা নেই বলে জানান তারা। তবে অনেকেই হাটে আসছেন। দাম-দর করছেন কিন্তু গরু ক্রয় করছেন না। তাই ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি বলে জানান বেপারিরা।

সূত্রমতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবেব কারণে রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। শুরুতে ২৪টি হাট বসানোর উদ্যোগ থাকলেও এখন দুই সিটি এলাকায় মাত্র ১৭টি হাট বসানো হবে। ২৮ জুলাই থেকে ঈদের দিনসহ মোট ৫ দিন অস্থায়ী হাট কার্যকর থাকবে। এরমধ্যে ছয়টি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ১১টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায়।

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়ে ইজারাদারদের বেশকিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে। সেগুলো অনুসরণ না করলে ইজারা বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া যারা পশু কিনতে যাবেন, তাদেরও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে হাটে প্রবেশ করতে হবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দুই সিটি করপোরেশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ডিএসসিসি’র সূত্র জানায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার ডিএসসিসিতে ১১ পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত হওয়া ১১টি পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে-কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব-সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক ই, এফ ও জি-এর সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ-সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ-সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট-সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ-সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ-সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল-সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা এবং রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।

ডিজিটাল গরুর হাট

পশুর হাটগুলো কোভিড-১৯ ছড়ানোর ‘হটস্পট’ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে সরকারি-বেসরকারিভাবে শহর-মফস্সলে হাটের সংখ্যা সীমিত করে অনলাইনে পশু বিকিকিনিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাই অনেকেই ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করছেন পশু ক্রয়ে।

অনলাইন বা ‘ডিজিটাল’ হাটগুলোর বড় সুবিধা হলো করোনার ঝুঁকি নেই। ইতিমধ্যে জমজমাট আয়োজনের পসরা সাজিয়েছে নানা নামের অনলাইন পশুর হাট। ই-কমার্স গ্রুপগুলোর পাশাপাশি ফেসবুক পেজেও চলছে গরু-ছাগল কেনা-বেচা। হাতের স্মার্ট ফোন কিংবা ল্যাপটপে ক্রেতারা ডিজিটাল হাটে ঘুরছেন। পশুর ছবি, ভিডিও দেখছেন। পশুর জাত, ওজন, সলিড গোশতের পরিমাণ, বয়স, দাঁতের সংখ্যাসহ সব তথ্য জানা যাচ্ছে। মেসেজে কিংবা সরাসরি ফোনে দরদাম করছেন। অতঃপর সবকিছুতে পরিতুষ্ট হলে ঘরে বসেই অর্ডার দিয়ে কিনতে পারছেন।

ডিজিটাল কেনাকাটায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পশুর দাম পরিশোধের পাশাপাশি থাকছে হোম ডেলিভারির সুবিধা। আরেকটি বাড়তি সুবিধা হলো—অনলাইনে পশু কিনলে কোনো ধরনের খাজনা বা হাসিল দিতে হয় না। রাজধানীসহ জেলা-উপজেলাগুলোতে সরকারিভাবেও চালু হয়েছে অনলাইন পশুর হাট। সরকারের আইসিটি বিভাগ এবং প্রাণিসম্পদ অফিসগুলোও চালু করছে এগুলো। সারা দেশেই চালু করছে এই অনলাইন হাট। কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতন করতেও নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অফিসগুলোও এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে।

ই-কমার্স উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে অনলাইনে পশুর হাটের যাত্রা শুরু প্রায় এক দশক হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণেই এ বছর পশুর এই ভার্চুয়াল হাট জমে উঠেছে।

ক্ষতির আশঙ্কা

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য জানায়, এ বছর সারা দেশের খামারিরা কোরবানির জন্য ১ কোটি ১৯ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত করেছে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে গত বছর সারা দেশে এক কোটি ৫ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ এবং শুধু ঢাকা মহানগরীতে ১৮ লাখ পশু কোরবানির জন্য বিক্রি হয়েছিল। তবে এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় আছেন বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা। সারাবছর কসাইখানায় গরু বিক্রির সুযোগ থাকলেও ক্ষুদ্র খামারিদের লক্ষ্য থাকে কোরবানির হাটে বেশি লাভে পশু বিক্রি করার। বিশেষ করে যারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে একটি বা হাতে গোনা কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন, তারা এ বছর আকর্ষণীয় দামে গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে সংশয়ে আছেন।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম