দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শুক্রবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৬৫ জন; যাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৮৮২ জন ও মারা গেছেন ২৯৮ জন। রোগী বাড়তে থাকায় করোনা চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে চিকিৎসকদের এবং এরই অংশ হিসেবে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের এ পদক্ষেপে ইতিবাচক ফল মিলতে পারে।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ৪৫ জন কোভিড আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হবে; একইসঙ্গে অপর ৪৫ জনকে প্রচলিত অন্য চিকিৎসা দেয়া হবে। মূলত এ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই মুমূর্ষু রোগীদের ওপর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হবে।
প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করার সম্ভাব্যতা দেখতে এপ্রিলের শুরুতে আগ্রহের কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজির অধ্যাপক ডা. এমএ খান। পরে ১৯ এপ্রিল তাকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
প্লাজমা থেরাপি একটি পরীক্ষিত চিকিৎসা পদ্ধতি; বিশেষ করে যখন কোনো রোগের নির্দিষ্ট ওষুধ ও সুস্পষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকে না, তখন এটি কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে চীন, আমেরিকাসহ অন্য অনেক দেশে করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির সফলতা প্রমাণিত হয়েছে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মানবদেহ থেকে সরাসরি প্লাজমা সংগ্রহের ‘অ্যাফরেসিস মেশিন’ রয়েছে ১৫ থেকে ১৮টি। এই মেশিনের সাহায্যে একজন মানুষের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে ২০০ এমএল প্লাজমা তৈরি করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে একটি মেশিন দিয়ে দৈনিক ১০-১২ জনের প্লাজমা সংগ্রহ সম্ভব।
তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দাতা নির্বাচন। সাধারণত নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের শরীর থেকে প্লাজমা নেয়ার বিধান নেই এবং এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। ২০-৩৫ বছর বয়সীদের শরীরের অ্যান্টিবডি শক্তিশালী থাকে। তাই এই বয়সীদের মধ্যে যারা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন, তাদেরই শুধু দাতা হিসেবে নির্বাচন করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের সবচেয়ে বড় সেন্টারটি হবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া রাজধানীর আরও দু-একটি হাসপাতালে রোগীদের ওপর এ থেরাপি প্রয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তারা। তবে এক্ষেত্রে একটি সমস্য রয়েছে আর তা হল, প্লাজমাদাতার রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ জানতে একটি বিশেষ কিট প্রয়োজন হয়, যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে এবং প্রতিটি কিটের দাম পড়বে অন্তত দেড় লাখ টাকা।
আমরা মনে করি, অত্যন্ত সঙ্গত কারণেই প্লাজমাদাতার কাছ থেকে কিটের খরচ নেয়া যাবে না। আপাতত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিজস্ব খরচে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে শুরু হলেও বড় আকারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গেলে সরকারি সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে এসব কিট সরবরাহের পাশাপাশি প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিটি পর্যায়ে সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এটাই প্রতাশা।
Leave a Reply