নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য উপজেলা রামগড়। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলো এমনিতেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে আধার। তবে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে সেই সৌন্দর্য্য যেন পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হয়েছে। পাহাড়, অরণ্য, ঝর্ণা, চা বাগান-সব মিলেমিশে সৃষ্টি করেছে এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য্য। বিভিন্ন ঋতুতে সেই সৌন্দর্য্য বিভিন্ন মাত্রা পায়। শীত ঋতুতে রামগড়ের শ্যামল সৌন্দর্য্য মোহিত করবে যে কাউকে। পাহাড়ি সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি পাহাড়ি মানুষদের বৈচিত্রময় জীবন, তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি নাগরিক মানুষকে নিয়ে যাবে ভিন্ন এক জগতে, বেঁচে থাকার আনন্দকে করবে পরিপূর্ণ।
তবে একটু পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অনেক অফিসাররাই এখানে থাকতে চান না। সেজন্য হয়তো সাধারনের সঙ্গে তাদের দূরত্বও কমেনি কখনো। কিন্তু সেই সঙ্কট এবার কিছুটা দূর হয়েছে।
রামগড়ে এখন আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের দূরত্ব নেই। ধনী-গরিব ছোট-বড় সবাই এখন সরকারি কর্মকর্তাদের সান্নিধ্য পাচ্ছেন। আ.ন.ম. বদরুদ্দোজা উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের জন্য নিজের অফিসের দরজা খুলে দেয়া এখন প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে অনেকখানী।
আ.ন.ম. বদরুদ্দোজা রোমান অত্র উপজেলার নির্বাহী অফিসার পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই উপজেলার অন্যতম প্রধান খাত পর্যটনও এগিয়েছে অনেক দূর। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ‘এক ইঞ্চি ভূমি ও অনাবাদী রাখা যাবে না’ এই ঘোষনায় অনুপ্রাণিত হয়ে বদরুদ্দোজা পাহাড়ী অনাবাদী ভূমিগুলোকে আবাদী করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
তার অনুপ্রেরণায় কুমিল্লার কিছু উদ্যোক্তা পার্বত্য শান্তি চুক্তি আইন মেনে অবহেলা এবং অযতেœ পড়ে থাকা ১৫ একর ভূমি বাগান করেছেন। বাগান করতে স্থানীয় জমির মালিক মোঃ মুসা মিয়া এবং মো. শাহজাহানের থেকে ৩০ বছরের জমি লিজ নিয়েছেন।
১৫ একর জমিতে দেশি-বিদেশি প্রায় আট হাজার চারা রোপন করেছেন উদ্যোক্তারা। বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন শ্রমিক কাজ করে। ফলে করোনাকালীন দুর্যোগে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এমন কর্মকান্ডে উৎসাহিত হয়ে আশেপাশের জমির মালিকরাও তাদের অনাবাদি জমি আবাদী করতে পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
বদরুদ্দোজা রামগড়ে যোগদান করার কিছুদিনের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দেয়। করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার পৌঁছে দিয়েছেন প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে। ত্রাণের প্যাকেট তৈরি থেকে বণ্টন পর্যন্ত অন্যদের সঙ্গে নিজে হাতে করেছেন সব কাজ।
স্থানীয় দিনমজুর জ্যোতি রানী ত্রিপুরা বলেন, করোনার মধ্যে কোনো কাজ ছিল না। তখন বাগানে কাজ করার সুযোগ পাই। যা পাই তা দিয়ে সংসার চলে।
রামগড় উপজেলা পরিষদের ভাইসচেয়ারম্যান আনোয়ার ফারুক জানান, ইউএনও আ.ন.ম. বদরুদ্দোজা রামগড়ে যোগদানের কিছুদিনের মাঝেই সবার সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে দীর্ঘদিনের অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাওয়া রামগড় পার্কের সৌন্দর্যবধর্নে পার্কের সংস্কার এবং আলোকসজ্জার কাজ করেছেন। পুরো উপজেলার নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে স্থাপন করেছিলেন সিসিটিভি ক্যামেরা। রামগড় সোনাইপুল টোলপ্লাজার ব্যাপক অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন। যা পূর্বের কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা করেনি।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান বদরুদ্দোজা রোমান শৈশব থেকেই স্বদেশ প্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে ওঠেন। সরকারি চাকরী জীবনের গত ১০ বছরে তিনি জনসাধারণের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে জনসাধারণের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ। দায়িত্বরত প্রত্যেক এলাকায় তার কার্য্যালয় ছিলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। যে কোনো সময় যে কেউই তার থেকে সরাসরি সেবা পেতেন। তার কার্য্যালয় ছিলো অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত। সর্বশেষ গত ৫ মাস যাবৎ চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চলমান করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তেও তিনি জনহিতকর কর্মকান্ডে শতভাগ সক্রিয় ছিলেন। দায়িত্বরত প্রত্যেক এলাকা থেকেই বিদায়কালে সদালাপী, মিষ্টভাষী ও নিরহংকারী সরকারি কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা রোমানের জন্য অশ্রুবিসর্জন দিতে দেখা গেছে জনসাধারণকে।
নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম বদরুদ্দোজা ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। বিদায়লগ্নে সাংবাদিকদের সাথে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অল্প সময়ে প্রকৃতি কন্যা রামগড় ও এর সহজ সরল মানুষগুলোকে ভালোবেসে ফেলেছি। ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে তবুও সরকারি আদেশে যেতে হবে। সব সময় শুভকামনা থাকবে রামগড় বাসীর জন্য।
বদরুদ্দোজা রোমান লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে চট্টগ্রাম ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি ২৯তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে (বিসিএস-এডমিন) উত্তীর্ণ হন। ২০১০ সালে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। ২০১১ সালের ১আগস্ট শরীয়তপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কর্মজীবন শুরু করলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নোয়াখালীর চাটখিল, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পাশাপাশি দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ গত ৫ মাস যাবৎ তিনি চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৩০ জুলাই কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পান আ.ন.ম বদরুদ্দোজা রোমান।
Leave a Reply