তার আসল নাম আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিউ। একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক নারী। তিনিই বিশ্বব্যাপী মাদার টেরিজা বা মাদার তেরেসা নামে পরিচিত।
বাবার নাম নিকোলো ও মায়ের নাম ছিল দ্রানা বয়াজিউ। তেরেসার আট বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। ছোটবেলা থেকেই সন্ন্যাস জীবন ও মানুষের সেবা করার প্রতি টান ছিল তার।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং ‘সিস্টার্স অফ লোরেটো’ সংস্থায় যোগ দেন। ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৯১৯ সালে তার আগমন এরপর জীবনের বাকি অংশ তিনি ভারতেই কাটান।
সেদেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার পর তিনি বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় প্রথম দিকে তিনি খুব কষ্ট করেন। গরিব এবং অনাহারীদের খাবার ও আবাসনের অর্থ জোগাড়ের জন্য তাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।
১৯৩০ সালে তিনি কলকাতার সেন্ট মেরি ক্যাথলিক গার্লস স্কুলে পড়ানো শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে মিশনারির কাজ শুরু করেন।
ত্যাগ করেন প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস। পোশাক হিসেবে বেছে নেন নীল পাড়ের সাধারণ সাদা সুতি শাড়ি।
১৯৫০ সালের ৭ই অক্টোবর তেরেসা ডায়োসিসান কংগ্রেস করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি পান। এ সমাবেশই পরবর্তীতে মিশনারিজ অব চ্যারিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
মাত্র ১৩ জন সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটি যাত্রা শুরু করে। যেখানে বর্তমানে ৪,০০০ এরও বেশি সন্ন্যাসিনী কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইড্স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়।
বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র্য, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সকলে অক্লান্ত পরীশ্রম করে যাচ্ছেন।
মুমূর্ষুদের সেবা দেওয়ার জন্য ১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা ‘হোম ফর ডায়িং’ প্রতিষ্ঠা করেন। একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্রদের জন্য দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘নির্মল হৃদয়’।
এছাড়াও সংস্থার শিশুদের লালন পালনের জন্য ১৯৫৫ সালে নির্মল শিশু ভবন স্থাপন করেন, এতিম ও বসতিহীন শিশুদের জন্য যেটি ছিল স্বর্গতুল্য। এভাবেই জীবনের শেষদিন গুলো পর্যন্ত মানুষের সেবায় নিয়জিত থাকেন তিনি।
১৯৭৯ সালে মাদার তেরেসা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। পুরস্কারের সব অর্থ তিনি গরিব দুঃখীদের দান করে দেন।
১৯৯৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহামানবী। ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে সেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন ও স্বীকৃতি প্রদান করেন।
Leave a Reply