1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্যবিধি মানায় কড়াকড়ি আসছে

  • প্রকাশকালঃ মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০
  • ৪৫০ জন পড়েছেন

শীত মৌসুমে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার লক্ষ্যে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব উদ্যোগের মধ্যে আছে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা বাজারে আসার পর দ্রুত তা সংগ্রহ করা, প্রয়োজনীয় অন্যান্য ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা, পরীক্ষা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ করোনার সংক্রমণ এড়িয়ে চলার বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো হবে যাতে মানুষ পরীক্ষার বিষয়ে অবহেলা না করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য হয়। এর অংশ হিসেবে মাস্ক ছাড়া বাইরে দেখা গেলে জরিমানা বা শাস্তির ব্যবস্থা করা হতে পারে। শীতকালে পিকনিক ও বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনে কড়াকড়ি আরোপ করার চিন্তা আছে সরকারের।

ইউরোপ-আমেরিকায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ। সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে কোনো কোনো দেশে। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার এখনো কমেনি। দৈনিক সংক্রমণের হার ১২ শতাংশের মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হার যতক্ষণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে না আসবে, ততক্ষণ ঝুঁকিমুক্ত বলার সুযোগ নেই।

আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে মৃদু শীত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর নভেম্বর থেকে দেশজুড়ে পুরো মাত্রায় নামবে শীত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে এ দেশে সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এটাকে মৌসুমি ‘ফ্লু’ বলা হয়। ফলে শীতে কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অবশ্য সম্প্রতি বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে, যা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজ করছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার সেনাবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, করোনা ফের হানা দিতে পারে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাসহ সচেতনভাবে চলাফেরা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়লে দেশের সাধারণ মানুষ যাতে আর্থিক দৈন্যে না পড়েন সেজন্য এখন থেকে ব্যয় সংকোচন নীতি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

যদিও গণপরিবহনসহ সব খানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মারাত্মক উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সম্প্রতি বিবিসি বাংলা জানায়, করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হলে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওইসব প্রস্তুতির মধ্যে আছে দেশের বাইরে টিকা বাজারে এলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা দেশের বাজারে নিয়ে আসা, ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকাসহ করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো। প্রস্তুতির মধ্যে আরো আছে প্রতি জেলায় একাধিক পরীক্ষাগারে আরটি পিসিআর মেশিনে পরীক্ষা নিশ্চিত করা, যেসব হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল সেগুলো প্রয়োজনে আবার কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা আরো জোরদার করা হবে।

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ বিষয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির তখনকার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, প্রাথমিকভাবে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় মাইকিং করা হবে, মসজিদগুলোতে ইমামদের মাধ্যমে জানানো হবে এবং স্টিকার লাগানো হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। এর মধ্যে থাকবে ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকায় প্রধান রাস্তা এবং অলিগলিসহ সব রাস্তায় ব্লিচিং পাউডারসহ জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে থাকবে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন তাদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এছাড়া মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে সংস্থাটির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলায় আমরা এখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এর মধ্যে মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং দূরত্ব বজায় রেখে চলার নির্দেশনা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা রয়েছে।’

দেশে গত তিন সপ্তাহ ধরে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজারের নিচে আছে, অর্ধেকে নেমে এসেছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও। পরীক্ষার সংখ্যা অনেক কম হলেও পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হারও নেমে এসেছে দৈনিক ১২ শতাংশের কাছাকাছিতে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যে এখন পর্যন্ত যে খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার অন্যতম হলো শিক্ষাব্যবস্থা। মহামারির কারণে এরই মধ্যে বাতিল করা হয়েছে পিইসি, জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা। সার্বিক বিবেচনায় এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলেই মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তাই আবারো বাড়তে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, করোনা থেকে রক্ষা পেতে হলে সরকারকে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। একটি করোনায় মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানায় বাধ্য করা। প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোরতা অবলম্বন করা। আর দ্বিতীয়টি টিকা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে ৫ শতাংশের নিচে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়ে আনতে হবে। অথচ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১২ শতাংশে অবস্থান করছে। ফলে করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। সব মানুষকে পরীক্ষার আওতায় নিতে আসতে হবে। এর জন্য র‌্যাপিড এন্টিবডি টেস্ট এবং র‌্যাপিড টেস্ট শুরু করতে হবে; সেটা শুরু করতে হবে উপজেলা পর্যায় থেকে।

আইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণে এখনো পর্যন্ত ভারত শীর্ষে রয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে। আমাদের এখানে সংক্রমণ এখনো সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা যায়নি। কারণ স্বাস্থ্য সচেতনা কম।’ ইউরোপ-আমেরিকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ওইসব দেশের নাগরিকরা কর্মস্থলে, নিজ গৃহে কিংবা যানবাহনে চলাচলা করলেও তাদের চলাচলের ক্ষেত্রগুলো সীমিত। অর্থাৎ বলা যায়, অল্প জায়গায় চলাফেরা করেন এবং সেখানে হিটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আর আমাদের এখানে সংক্রমণ কমেনি। কিন্তু মানুষদের মধ্যে করোনা প্রতিরোধে বা সুরক্ষায় যে সচেতনা থাকা দরকার সেটা অনেকাংশে কমে গেছে; ক্ষেত্র বিশেষে সচেতনা নেই বললেই চলে। দেখছি, গণপরিবহনে গাদাগাদি করে মানুষ চলাচল করছে। মাস্ক করার প্রবণতা কমে গেছে।’

করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি জানতে চাইলে ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘বিমানবন্দরগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করা এবং ভারতের সঙ্গে আমাদের যেসব বন্দরে রফতানি-আমদানি কার্যক্রম চলছে, সেখানে করোনা পরীক্ষা করে আক্রান্তদের আইসোলেশন করা এবং কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা দরকার।’

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বজলুর রশীদ বলেন, ‘এবার দেশে শীত একটু বিলম্বে আসবে বলে মনে করছি। আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনেকটা তাই বলছে। সেই অর্থে বলা যায়, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে মৃদু শীত অনুভূত হওয়া শুরু হবে।’ কারণ হিসেবে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, সাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এটির গতিমুখ ভারতের উড়িষ্যার দিকে। এই নিম্নচাপটি শেষ হতে দুই থেকে তিন দিন লেগে যেতে পারে। এরপর আরেকটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটিও বিদায় নিতে অক্টোবরের ২০-২২ তারিখ লাগতে পারে। তাই এ দুটি নিম্নচাপের পর বলা যায়, হালকা শীত অনুভব করতে শুরু করবে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ। আর নভেম্বরের দিকে দেশজুড়ে শীত জেঁকে বসতে পারে।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম