1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:২১ পূর্বাহ্ন
১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরণ ছয়টি মহাসাগরে সাঁতার কাটে মানবজাতি

  • প্রকাশকালঃ মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০
  • ৫৭৬ জন পড়েছেন

আশিন ধর্মপাল :


আমরা মানবজাতি প্রতিনিয়ত ছয়টি মহাসাগরে সাঁতার কাটছি। মহাসাগরে যেমন শত শত নদীর জল এসে মিশে যাওয়ার পরেও মহাসাগর কখনোই বলে না যে ‘আমি পূর্নতা লাভ করেছি’। বরং মহাসাগর পূর্বে যেমন ছিল, তেমনই থাকে। অনুরূপ আমরাও সেই মহাসাগরের মতই, প্রতিনিয়ত সাঁতার কাটছি ছয়টি মহাসাগরে। কখনো এই মহাসাগরে, কখনো বা ঐ মহাসাগরে। আর এভাবেই আমরণ এই ছয়টি মহাসাগরে সাঁতার কেটে গেলেও শেষ হবে না এই সাঁতার কাটা। কেননা, এই মহাসাগরের কূল কিনারা নেই।এই মহাসাগরগুলিকে যদি উপলব্ধি করতে চান, তাহলে শান্ত, নিরব নিস্তব্ধ একটা জায়গায় সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে বসুন। চোখ বন্ধ করে কয়েকটি দীর্ঘ শ্বাস নিন আর ছাড়–ন। মনের মধ্যে একাগ্রতা আনুন। তারপর চিন্তা করুন, সেই মহাসাগরগুলো কি? আসলেই কি মহাসাগর?

আপনি জানেন কি? সেই ছয়টি মহাসাগর কি কি?
১) চক্ষু, ২) কান, ৩) নাসিকা, ৪) জিহ্বা, ৫) দেহ (ত্বক) ও ৬) মন।

১) চক্ষু মহাসাগর:
সেই ছোটকাল থেকে আজ পর্যন্ত বা মৃত্যুর শেষ সময় পর্যন্ত এই চোখের দুয়ারে কত কিছু প্রবেশ করে, কত কিছু দেখি, সুন্দর, কুৎসিত, ভয়ঙ্কর, আকর্ষনীয়-অনাকর্ষনীয়, দর্শণীয়-অদর্শণীয়, পছন্দের-অপছন্দের। তারপরও এই চোখ কখনোই বলে না যে, ‘আমি দেখার মধ্যে পূর্ণতা লাভ করেছি’। শুধুমাত্র এই চোখের ইচ্ছাকে পূরণ করার জন্য মানুষ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করে আয়োজন করে নানান কিছুর, ভ্রমণ করে নানান জায়গায়। মানুষ প্রতিনিয়তই দেখছে আর দেখছে, শেষ নেই এই দেখার অদম্য ইচ্ছাটার। তারপরও কি দেখার ইচ্ছাটা পূর্ণ হয়? না। একসময় মানুষের চোখের পাতা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু শেষ হবে না তার দেখার দৃশ্য। মানুষ দেখছে অনন্ত সীমা। যেন তার এই দেখার ইচ্ছা দিন দিন প্রবল থেকে প্রবলতরই হচ্ছে। এটা যে পৃথিবীর সকল দৃশ্যমান রূপের মহাসাগর।

২) কর্ণ মহাসাগর:
একইভাবে আমরা মানবজাতি কর্ণ মহাসাগরেও সাঁতার কাটছি প্রতিনিয়ত। কানের ইচ্ছা পূরণ করার জন্যে কতধরণের মনোরঞ্জক গান শুনি। কানের স্বাদ মেটানোর জন্যইতো আজ পৃথিবীতে এতো রকমারি বাদ্যযন্ত্র। আর ঐসব বাদ্যযন্ত্রে লক্ষ কোটি সূর তৈরী হয় কেবল কানের ছোট্ট পর্দাকে আনন্দ দেয়ার জন্যে। তবু আমরণ কর্ণ মহাসাগরে শোনার ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়।

৩) নাসিকা মহাসাগর:
চক্ষু ও কর্ণ মহাসাগরের চেয়ে নাসিকাও কোনো অংশে কম নয়। এই নাসিকার জন্যইতো লক্ষ কোটিরও অধিক বাহারি রকমের সুগন্ধি দ্রব্য তৈরী হয়ে থাকে। পৃথিবীতে কেউই দুর্গন্ধে থাকতে চায় না। তাই মানবজাতি নিত্য-নতুন সুগন্ধি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর এই সুগন্ধির পেছনেই অনেকের দিন চলে যায় ]।

৪) জিহ্বা মহাসাগর:
যদি জিহ্বার প্রসঙ্গে বলি, যখন থেকে আমরা খেতে পারছি, তখন থেকেই স্বাদ অনুভব করছি। এক-দুদিন নয়, আমরা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নানান দ্রব্যের স্বাদ আস্বাদন করে চলেছি; তবু আমাদের এই জিহ্বার স্বাদ আস্বাদন শেষ হয় না। আজ এক রকমতো কাল অন্যরকম, পরশু আরেক রকম। আর এভাবেই একসময় আমরা জীবনের অন্তিম সময়ে পৌঁছে যাই; তবু আমাদের জিহ্বা স্বাদ আস্বাদনে পূর্ণতা পায় না। সে চায় আরও অনেক কিছুর স্বাদ নিতে। আর শুধুমাত্র এই জিহ্বার আস্বাদনের কারণেই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে হাজারো ধরণের মুখরোচক খাবার। যা শুধুমাত্র দু’ ইঞ্চি পরিমাণের জিহ্বার স্বাদ মেটানো জন্য। আজ খেয়েছি, কিন্তু এমন খাবার পরশু দেখলে আবারও জিভে চলে আসে লোভের জল। প্রতিদিন আমাদের এই জিহ্বার স্বাদ মেটানোর জন্য লক্ষ কোটি প্রাণী তাদের জীবন উৎসর্গ করছে, কিন্তু তারপরও আমাদের এই জিহ্বাটার চাই, চাই আরও চাই। এই জিহ্বার স্বাদ আস্বাদন কখনোই পূর্ণ হবার নয়। তা মহাসাগরের মতই অতি বিশাল।

(৫) ত্বক মহাসাগর (দেহ+চর্ম):
এই ত্বককে সাজানোর জন্য, তার চাহিদা মেটানোর জন্য পৃথিবীতে দিনরাত কাজ করছে, ছুটে চলেছে সবাই। কেউ নাকের সৌন্দর্যে, কেউ ত্বকের সৌন্দর্যে, কেউ ঠোঁটের সৌন্দর্যে। পৃথিবীতে কে সুন্দর হতে চায় না বলুন। সবাই হতে চায়। তাইতো এক-দুদিন নয়। সারাটি বছর, সারাটা জীবনই রূপচর্চার পেছনেই চলে যায় অনেকের। অথচ তারপরও উপরের এই পাতলা চামড়ার এই ইচ্ছাটাকে পূরণ করতে পারে না কেউই। আমরা সবাই এই পাতলা চামড়া দাস হয়ে আছি। ক্ষুদ্র জীবনে হাজার হাজার পোশাক পরছি, বিভিন্ন মানের পরছি, কিন্তু দেহটার চাহিদা তখনো শেষ হয় না। দেহটার সুখের জন্য বড় বড় রাজ প্রাসাদ, সৌন্দর্য্যে পূর্ণ দালান-কোঠা অবিরত নির্মান করেই চলেছি। নানান ভাবে এই দেহটার চাহিদা মেটাচ্ছি। কিন্তু তারপরও শেষ হয় না এই দেহের চাহিদা। এমনকি মত্যুর পরেও দাবি রাখি এই মূল্যহীন পঁচা দেহের উপর। এই দেহটা যে ভোগ, কামনার অপূর্ণ এক মহাসাগর, তাকে যত দেবো, সে ততই ভোগ করবে। কখনো বলবে না আমার ভোগের স্বাদ মিটে গেছে।

(৬) মন মহাসাগর:
চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বকের মতই আমাদের মনও এক মহাসাগর। জীবনের শুরু থেকে অন্তিম শয্যা পর্যন্ত কত হাজার-লক্ষ পরিকল্পনা করছি, চিন্তা করছি, স্বপ্নের জাল বুনছি, মনের মায়ার জালে কত কি আবদ্ধ করছি; কিন্তু শেষ হয় না মনের এই অনন্ত পথ। মন তার নিজস্ব মহাসাগরে প্রতিনিয়ত অন্ধ মানুষকে আরও দিশেহারা করে ঘূর্নায়ন রাখছে তার মিথ্যে জালে। আর আমরাও প্রতিনিয়ত মনের এই মিথ্যে প্রবঞ্চনার মহাসাগরে ভেসে বেড়াচ্ছি। মন যেটা চাইলো, সেটার সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই দিয়ে দিলাম, করে ফেললাম। মনের উপর নিয়ন্ত্রন নেই কারোরই। এই মনের পেছনে যতই দৌঁড়াবেন, ততই ক্লান্ত হবেন। কিন্তু মন আপনার থাকবে না। সে প্রতিনিয়তই দৌঁড়াতে থাকবে, আর আপনাকেও দৌঁড়াবে।

আমরা দেহের এই ছয়টি মহাসাগরে প্রতিনিয়তই ভেসে বেড়াচ্ছি। এই পঞ্চ ইন্দ্রিয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রক হলো মন। এই ছয়টি ইন্দ্রিয়ই অপূর্ণ ভোগের এক মহাসাগর। মহাসাগরে বিচরণ করা মৎস যেমন মহাসাগরের আয়তন-বিস্তৃতি জানে না, তেমনি এই দেহধারী মানুষও নিজের দেহের এই মহাসাগরগুলোর বিস্তৃতি কতটুকু এবং কোথায় শেষ হবে এই বাসনার, তা কিছুই জানে না।
যেখানে চোখ নামক একটা মহাসাগরকেই মানুষ পূর্ণতা দিতে পারি না, সেখানে যদি পাঁচ পাঁচটি মহাসাগর কেমন করে পূর্ণতা লাভ করবে? শত হাজার বর্ষ ধরে মানুষ যে যত যা কিছুই আবিস্কার করুক না কেন, এই মহাসাগর কখনোই পূর্ণ হবার নয়। তাইতো মহাসাগরসমান এই পঞ্চইন্দ্রিয় ও তাদের নিয়ন্ত্রক মন, এই ছয়টির পেছনে ছুটা বৃথা। যার কাছে সন্তুষ্টি নামক ধন আছে, সেই এই ছয়টি মহাসাগরের মধ্যে থেকেও সুখে বাস করে।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম