মোজাম্মেল হক আলম :
কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। লাকসামে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আনন্দ-বেদনায় দিনাতিপাত করছেন ভাসমান বেদে স¤প্রদায়। পৈত্রিক পেশা ধরে রাখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে তারা লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁবু গেড়ে জীবনযাপন করছেন। দু-মুঠো খাবারের জন্য সপরিবারে করে যাচ্ছেন সংগ্রাম।
বেদে সম্প্রদায়ের প্রতিটি পরিবার বছরে ছয় মাস পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজেদের জন্মস্থান ছেড়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় গিয়ে খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টাঙিয়ে জীবনযাপন করেন। প্রতি বছরই লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আসেন বেদে সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবার। বর্তমানে লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকার মুদাফফরগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন মাঠে খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টাঙিয়ে বসবাস করছেন ১০/১২টি পরিবার। সম্প্রতি তাদের ভাসমান বসবাস স্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ১০/১২টি বেদে পরিবারের শিশু-নারীসহ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মানুষ গত বছর খানেক ধরে এখানে বসবাস করছেন। জীবিকার জন্য তারা লাকসামে বিভিন্ন গ্রামের নিভৃত পল্লীতে মানুষের বাড়ি বাড়ি বানরের খেলাসহ বিভিন্ন রোগ মুক্তির গল্প শুনিয়ে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ, সিংয়া লাগানো, দাঁতের পোকা তোলা, কটক মাছের কাঁটা ও বাতের ব্যথার তেল বিক্রির জন্য বেড়িয়ে পড়েন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের প্রচারণা কার্যক্রমেও পিছিয়ে নেই তারা। সম্প্রতি লাকসাম পৌর শহরের বিভিন্ন দেয়াল ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে বেদে সম্প্রদায়কে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবচ, তন্ত্র-মন্ত্রের বিজ্ঞাপনি পোস্টার ঝুলাতে দেখা গেছে। এসব করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকেন তারা। তবে এখনকার যুগে আর আগের মতো বানরের খেলাসহ তাবিজ কবচের প্রতি মানুষের বিশ্বাস অনেক কমে গেছে। তারপরও তারা বাপ-দাদার পেশা যুগের পর যুগ ধরে রেখেছেন বলে জানান আছিয়া খাতুন ও রহিম মিয়া। তারা আরো জানান, সারা দিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় করে তা দিয়ে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বেদে স¤প্রদায়ের ষাটোর্ধ্ব মরণ আলী জানান, একদিকে বেঁচে থাকার লড়াই, অন্য দিকে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। গত কয়েক যুগ ধরে স্ত্রী-সন্তান ও ছেলে-মেয়েসহ নাতি-নাতনিদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা আকাশের নিচে তাবুতে বসবাস করে জীবন বাঁচার জন্য লড়াই সংগ্রাম করেই যাচ্ছি। আমাদের বেদে সম্প্রদায়ের যত দিন যাচ্ছে, ততই করুন পরিণতি বেড়ে চলেছে। আমাদের মতো শত শত গরিব অসহায় বেদে পরিবার বেঁচে থাকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে একই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। দেশ-বিদেশে ঘুরে শত কষ্টের মাঝেও আমরা সুখ খুঁজে বেড়াই। সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিলে বেদে স¤প্রদায়ের পরিবারগুলো সচ্ছল হতো।
Leave a Reply