মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই করার জন্য নতুন ‘প্রমাণক’ নির্ধারণ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এখন থেকে ওই সনদ যাচাই হবে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া গেজেট ও তথ্যের আলোকে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, শিক্ষাবৃত্তি পাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে নতুন প্রমাণক। ফলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ভর্তি নেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঋণদাতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। একইভাবে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান এবং পোষ্যদেরও সনদ যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
মুুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সনদ যাচাইয়ের বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয় গত ১৮ অক্টোবর। ওই পরিপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীসহ সরকারের সব মন্ত্রণালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো শুরু হয়েছে। পরিপত্রে সাতটি শ্রেণিতে ৩৩টি প্রমাণক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ক. ভারতীয় তালিকা (পদ্মা, মেঘনা, সেক্টর, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী); খ. লাল মুক্তিবার্তা (চূড়ান্ত লাল বই) ও লাল মুক্তিবার্তায় স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা; গ. গেজেট (বেসামরিক গেজেট, প্রবাসে বিশ্ব জনমত গেজেট, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত গেজেট, বিসিএস গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক গেজেট, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা, মুজিবনগর গেজেট; ঘ. বাহিনী গেজেট (সেনা, নৌ, বিমান, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও নৌ-কমান্ডো); ঙ. শহীদ গেজেট (শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেট, শহীদ বিজিবি গেজেট, শহীদ পুলিশ গেজেট); চ. খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট; ছ. যুদ্ধাহত (যুদ্ধাহত গেজেট, যুদ্ধাহত পঙ্গু, যুদ্ধাহত বিজিবি গেজেট ও যুদ্ধাহত সেনা গেজেট)।
নতুন এ তালিকা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাইয়ে আগের সব বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হলো। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুকূলে আর সাময়িক সনদ দেওয়া হবে না বলে মুক্তিযোদ্ধাদের যথার্থতা নির্ণয়ে সাময়িক সনদ বা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (বামুস) সনদ প্রযোজ্য হবে না। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে কোনো মুক্তিযোদ্ধার তথ্যাদি ও গেজেট না থাকলে আবেদনকারী কোনো ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কোনো সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। এ নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে পরিপত্রে।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এখন থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাইয়ের সব কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া গেজেট ও তথ্যের আলোকে নির্ধারিত হবে। আমরা চাই না এজন্য মন্ত্রণালয়ে এসে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবারের সদস্যরা ভিড় করুন, ভোগান্তির শিকার হন। সনদ যাচাইয়ের বিকল্প নির্ধারণে কয়েক বছর ধরেই আমরা কাজ করছি। এবার সুনির্দিষ্ট একটি গাইডলাইন করেছি। যার মাধ্যমে ওয়েবসাইট থেকেই সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও তথ্যাদি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টরা যাচাই করতে পারবেন। মন্ত্রণালয় আর কোনো সনদ প্রত্যয়ন বা যাচাই-বাছাই করবে না।’
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সনদ যাচাইয়ের জন্য অনেককেই ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভিড় করতে হয়। সনদগুলো মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই করে নেওয়ার পরও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ভর্তি নেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও ফের সনদ যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। ফলে নানা ধরনের ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ে না এসে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এই নতুন প্রমাণক নির্ধারণ করেছে সরকার।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার। তবে ডেটাবেইসে যুক্ত হয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার। বর্তমানে ভাতা পাচ্ছেন ২ লাখ ৩ হাজার মুক্তিযোদ্ধা। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা ১২ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পান। এ ছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যরাও শ্রেণিভেদে ২০ হাজার থেকে শুরু করে ৪৫ হাজার টাকা হারে মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। এর সঙ্গে গত অর্থবছর থেকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা হারে বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply