মোজাম্মেল হক আলম :
১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকাল বেলা। কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার আজগরা বাজার। আজগরা ধান বিক্রির জন্য বাজারটি প্রসিদ্ধ ছিলো। তখন আজগরা, উত্তরদা ইউনিয়ন এবং নাঙ্গলকোট উপজেলার কিছু গ্রামের মানুষ এখানে বাজার করতো। সেদিন ছিলো হাটবার। বাজারে উপচেপড়া ভিড়। হঠাৎ মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো পকিস্তানী দুইটি যুদ্ধ বিমান। মিনিট খানেক সময় পরেই আবার ফিরো এলো বিমান দুইটি। বাজারে বোমা ফেলা হলো। ধ্বংসলীলা নেমে এলো আজগরা বাজারে। যে যার মতো ছুটতে লাগলো চার দিকে। মুহূর্তে খালি হয়ে গেল বাজার। বীভৎস লাশ হয়ে মাটিতে পড়ে রইলো অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হলো দুই শতাধিক। হাত-পা বিহীন অনেকেই এখনো বেঁচে আছেন। এ দৃশ্যগুলো বর্ণনা করেন আজগরা বাজারের বর্ষিয়ান ব্যবসায়ী রমজান আলী। ৭৬ বছর বয়সের রমজান আলী তখন তরুণ। তার দোকানের এক‘শ গজ সামনেই আজগরা তরকারি বাজারে এ বর্বর হত্যাকান্ড ঘটে।
স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও সেখানে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ হয়নি। নিহত ও আহতদের পরিবারের খোঁজ কেউ নেয়নি। এতগুলো মানুষের মৃত্যুদিনে কেউ স্মরণ সভারও আয়োজন করেনি। দক্ষিণ-পূর্ব লাকসামে আজগরা বাজারের বোমা ফেলার ঘটনা মানুষ আজো ভুলেনি।
নিহতদের একজন ওই ইউনিয়নের পাওতলী গ্রামের সাদেক হোসেন। তিনি ওই গ্রামের রমজান আলীর ৪ ছেলে ৩ মেয়ের সবার ছোট ছিলেন। তার ভাই মোবারক হোসেন (৭০) জানান, তার মৃত্যুর পর স্ত্রী চলে যায়। তার ভাইয়ের স্মৃতিচিহ্ন বলে কিছু নেই।
নিহতদের আরেকজন কালিয়া চৌঁ গ্রামের আলী আশ্রাফের স্ত্রী আয়েশা খাতুন জানান, ২ ছেলে ৫ মেয়ে রেখে তিনি মারা যান। খেয়ে না খেয়ে তাদের বড় করেছি। কেউ কোনো দিন আমাদের খবর নেয়নি।
আরেকজন আহত কালিয়া চৌঁ গ্রামের রমজান আলী। তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
লাকসাম উপজেলার মুক্তিযুদ্ধকালীন প্লাটুন কমান্ডার আবুল হোসেন ননী জানান, আজগরায় পাক-হায়েনাদের বোমা হামলায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা উচিত।
Leave a Reply