1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় খেলা কাবাডির উৎপত্তি ইতিহাস

  • প্রকাশকালঃ রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৯৪৪ জন পড়েছেন

নকশী বার্তা ডেস্ক : প্রতিটি দেশের একটি জাতীয় খেলা থাকে। ইংরেজদের জাতীয় খেলা ক্রিকেট, আমেরিকানদের জাতীয় খেলা বেস বল। আমাদের জাতীয় খেলা হাডুডু বা কাবাডি। কিন্তু কালক্রমে এই খেলার কদর হারিয়ে যেতে বসেছে। ১০ বছর আগেও স্কুল ভিত্তিক আন্তঃস্কুল বা থানা কাবাডি প্রতিযোগিতার আয়োজন চোখে পড়ত। বর্তমানে সেটাও চোখে পড়ে না। অনেকে হাডুডু খেলার নিয়ম পর্যন্ত জানে না।

কাবাডি এশিয়া মহাদেশের গ্রীষ্মকালীন দেশ সমূহের একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি প্রাচীন খেলা। এই উপমহাদেশে অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন নামে এ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। যেহেতু আঞ্চলিক খেলা, তাই কোনো বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন ছিল না।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলার পোশাকি নাম কাবাডি। কিছু দিন আগে পর্যন্ত হাডুডু খেলা ছিল বিনোদনের অন্যতম উৎস। হাডুডু প্রতিযোগিতার বিজয়ীদলকে পুরস্কারস্বরূপ ষাঁড়, খাসি, পিতলের কলসি কিংবা সোনা-রূপার মেডেল উপহার দেওয়া হতো। এটি একটি দলীয় খেলা এবং এ খেলায় খরচ বলতে কিছুই নেই।

Kabadi

ধারণা করা হয় যে প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানুষ একক ভাবে বা দলীয় ভাবে শিকার করতে এবং বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শিখেছিল, তখন কাবাডির সূচনা। পুরো দক্ষিণ এশিয়াতে কাবাডি প্রচলিত থাকলেও এর উৎপত্তি স্থল পাঞ্জাব। কাবাডির উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি মত হচ্ছে, মহাভারতে বর্ণিত অভিমন্যু কর্ত্তৃক কৌরব সৈন্যদের চক্রব্যুহ ভেদ করার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা থেকে ধারণা নিয়ে এ খেলার সৃষ্টি হয়।

কাবাডি খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত আরেকটি ধারণা হচ্ছে এটি আরম্ভ হয় তামিলনাড়–তে। দুটি বাচ্চা ছেলের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা থেকে এর ধারণা পাওয়া যায়, যদিও দম ধরে রাখার বিষয়টি তাতে পরে যুক্ত হয়। তামিল এলাকায় এ খেলাটি কাবাডি, সাডুগুডি, গুডুগুডু, পালিঞ্জাডুগুডু ও সাডুগুডাত্থি নামে পরিচিত। কাবাডি শব্দটি খুব সম্ভবত উৎপত্তি হয়েছে তামিল কাই (হাত) ও পিডি (ধরা) শব্দ থেকে। এ খেলা ভারত ও পাকিস্তানে কাবাডি, বাংলাদেশে হাডুডু, নেপালে ডুডু, শ্রীলংকায়, গুডুগুডু, থাইলান্ডে থিকাব ও মালয়েশিয়ায় ছি গুডু গুডু নামে প্রচলিত ছিল। ব্যক্তি ও দলগত ভাবে শত্র“পক্ষের আক্রমণ প্রতিহতকরণ এবং তড়িৎ পাল্টা আক্রমণের কৌশল চর্চা করতে গিয়েই এ খেলার উদ্ভব। এ খেলায় সফলতার পূর্বশর্ত হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক ক্ষিপ্রতা, পেশীর ক্ষিপ্রতা, ফুসফুসের শক্তি ও সহনশীলতা, দ্রুত চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ও তা প্রয়োগের সামর্থ্য এবং সর্বোপরি প্রতিপক্ষের কৌশল ও মনোভাব অনুধাবনের যোগ্যতা।

কাবাডি কোর্টের স্বীকৃত মাপ হলো ছেলেদের জন্য ১২ দশমিক ৫ মি বাই ১০ মি. এবং মেয়েদের জন্য ১১ মি বাই ৮ মি.। প্রতি দলে ৭ জন খেলোয়াড় থাকে এবং খেলার সময় প্রতি অর্ধেŸ ২০ মিনিট করে ৪০ মিনিট। মাঝখানে ৫ মিনিটের বিরতি। একজন রেফারি খেলা পরিচালনা করেন। তাকে সহায়তা করেন দুজন আম্পায়ার। একজন থাকেন যিনি পয়েন্ট গণনা করেন।
একটি ঐক্যবদ্ধ নিয়মে খেলাটি প্রচলনের জন্য ১৯৫০ সালে ভারতে জাতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৫৩ সালে এই ফেডারেশন কাবাডি খেলার নিয়মকানুন প্রণয়ন করে। কয়েক বছর বিচার বিশ্লেষণ করে ১৯৬০ সালে কিছু নিয়মকানুন সংশোধন ও সংযোজন হয়। ১৯৭৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম কাবাডি টেস্ট বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় কাবাডি দল ৫টি টেস্টে অংশগ্রহণ করে ৪-১ এ জয়লাভ করে। এ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহের সৃষ্টি করে। ফিরতি টেস্ট খেলার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় কাবাডি দল ১৯৭৯ সালে ভারতে যায়।
১৯৮৭ ভারতের ইস্পাতনগরী নামে খ্যাত মধ্য প্রদেশের ভিলাই স্টিল মিলের গেস্ট হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারত বাংলাদেশ ও নেপালের প্রতিনিধিবৃন্দ যোগদান করেন। উক্ত বৈঠকে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। এরই সূত্র ধরে ১৯৮০ সালে প্রথম এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল অংশগ্রহণ করে। ভারত চ্যাম্পিয়ন ও বাংলাদেশ রানার্স-আপ হয়।

স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের খেলাধুলার গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ফেডারেশন পুনর্গঠন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে পশ্চিম বাংলার আসানসোলে ভারতের জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ থেকে কাজী আনিছুর রহমান ও আমীর হামজা আসানসোলে যান। তখন থেকে ভারতীয় কাবাডি খেলার নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৮০ সালে ভারতের এনআইএস থেকে কাবাডি খেলার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে আবদুল হক বাংলাদেশে কাবাডি খেলার কলাকৌশল ও নিয়মকানুন প্রবর্তন করেন।
বাংলাদেশের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে কাবাডি খেলা নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন থেকে কাবাডি খেলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে। ১৯৯০ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে এই খেলাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। এরপর থেকে কাবাডি খেলা নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে এশিয়ান গেমসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানে কাবাডি খেলা কয়েকটি দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, জাপান, থাইল্যান্ড, ইরান, মালয়েশিয়া ও কোরিয়া অন্যতম।

এসব দেশের ফেডারেশন কাবাডি খেলার উন্নতি ও প্রসারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কানাডার মতো দেশেও এ খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিল এই খেলাটিকে নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম