নকশী বার্তা ডেস্ক : জীবনযাপনের জন্য সবাইকেই কোনো না কোনো পেশায় জড়াতে হয়। আবার কেউ কেউ শখে অনেক পেশায় জড়িয়ে যায়। পছন্দের পেশাকে মূল্যায়ণ করলে ক্যারিয়ার স্বাচ্ছন্দে গুছিয়ে নেওয়া যায়। এমন ই একটি ফ্যাশনেবল পেশা হলো বিলিয়ার্ড গেইম ক্লাব। এবারের ক্যারিয়ারে বিলিয়ার্ড গেইমের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন মাহবুব শরীফ ।
বিলিয়ার্ড হলো লুই একাদশ রাজত্বের সময় বা ১৫ শতাব্দীতে জন্মানো একটি খেলা। সে সময়ে একটি টেবিলে চাদর দিয়ে ঢেকে একটি লাঠির মাধ্যমে খেলা হতো। আজ পুল ঘরানার যেমন ফরাসি বিলিয়ার্ড (ক্যারাম), বিলিয়ার্ড ইংলিশ অথবা ৮ পুল, স্নোকার, বিলিয়ার্ড ইটালিয়ান, কোরিয়ান স্নোকার, রাশিয়ান বিলিয়ার্ড বা ভারত স্নোকার—প্রতিটি খেলার নিজস্ব নিয়ম আছে। প্রথমদিকে খেলা এবং খেলোয়াড়দের একটি বল পকেটে নিতে চাইলে তাদের নিজ নিজ রং নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত রংয়ের সমস্ত বল পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সব বল নেওয়া হয়ে গেলে কালো বলকেও সংগ্রহ করতে হবে। যিনি প্রথম তার নির্দিষ্ট বলগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন, তখনই তিনি খেলা জিতে যাবে। আমাদের দেশে ৮ বল, ৯ বল, ১০ বল ও ১৫ বলের খেলা হয়ে থাকে। দেশীয় টুর্নামেন্টগুলোতে ৮ ও ৯ বলের খেলাই বেশি হয়ে থাকে। প্রতি গেম বা ঘণ্টা এই দুই উপায়ে বিলিয়ার্ড খেলা হয়ে থাকে। প্রতি গেম ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং প্রতি ঘণ্টা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে খেলতে হয়।
খোরশেদ আলম বাদল ।বর্তমানে তিনি পুল জোনের (Pool Zone) প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার। বর্তমানে চারটি বিলিয়ার্ড ও একটি স্নুকার বোর্ড নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি চলছে । তার সাথে আলাপচারিতার সময় অনেক তথ্য তুলে ধরেন তিনি।তিনি বলেন বিলিয়ার্ড বাংলাদেশে একটি রাইজিং গেম । খুব দ্রুত এই গেমটি ফেডারেশনের আওতায় চলে আসবে বলে আশাকরি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার জন্য ট্রেড লাইসেন্সে বিলিয়ার্ডের ধরণ যুক্ত ছিলো না, আমরাই ট্রেড লাইসেন্সে বিলিয়ার্ডকে তালিকাভূক্ত করি। ইনডোর গেমের মধ্যে বিলিয়ার্ড অন্যতম।বাংলাদেশে যতোগুলো পুল ক্লাব আছে প্রায় সবাই একতাবদ্ধ হয়ে আছে। এটাতো ফ্যাশন এ্যাবল গেম, ব্যবসা হিসেবে বিলিয়ার্ড ক্লাব কতোটা ব্যবসা সফল।এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বলেন- একটা সময় ছিলো যখন আমরা এই ক্লাব উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম খেলা দেখা ও শেখার জন্য। এখন বাংলাদেশে প্রচুর প্লেয়ার তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও অংশগ্রহন করে বাংলাদেশের প্লেয়াররা। বিলিয়ার্ডকে আমরা শুধু ব্যবসা হিসেবেই দেখছি না , তরুনরা যেনো নেশা মুক্ত থাকে সে জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকি । প্রতি বছর অনেকগুলো স্কুল কলেজে ফ্রি ক্যাম্পেইন সহ কলম প্রদান করি। প্রতি বছর স্কুল কলেজ ও ইউনিভার্সিটি লেভেলে আলাদা আলাদা গেম প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি । উত্সাহ পুরস্কার বিতরনের মধ্যদিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন ম্যসেজ যুব সমাজে পৌছে দেই। এ রকম একটি ক্লাব করতে কেমন মূলধন প্রয়োজন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ৪/৫ বোর্ড দিয়ে প্রথমে ক্লাব চালু করতে চাইলে স্পেস ভাড়া , এসি করন, ডেকোরেশনসহ আনুমানিক ৭০ লাখ থেকে ১কোটি টাকা লেগে যাবে। সেই তুলনায় প্রফিড খুব কমই আসে। এই খেলার জন্য কোনো বয়সের বাধা নেই ,সব বয়সের প্লেয়াররাই এই খেলা খেলতে পারে। তবে তরুনরাই একটু বেশি খেলে।একটি ক্লাব এটি। বাংলাদেশের বিলিয়ার্ড টেবিলের আমদানিকারক এই প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বলেন, ‘বিলিয়ার্ড ক্লাবে প্রফিট যাই হোক এটা একটি মেন্টালি রিফ্রেশের জায়গা। মানসিক তৃপ্তির জন্যই আমি বিলিয়ার্ডকে ভালোবাসি আর ভালোবাসা থেকেই আমার এই প্রতিষ্ঠান। যদিও আজ এর মাধ্যমে আমার পরিচিতি অনেক। এই ব্যবসা সম্পর্কিত দেশ ও দেশের বাইরের অনেকেই আমাকে এবং আমার প্রতিষ্ঠানকে চেনে। আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে বিদেশী কোচ দিয়ে প্লেয়ারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের প্লেয়াররা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলেছে।’ এই ব্যবসাটি ক্যারিয়ার হিসেবে কতটা সম্ভাবনাময়, এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ক্রিকেটটা খুব জনপ্রিয়। আর ফুটবল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। তারপরও বাসকেট বল, টেনিসসহ এরকম অসংখ্য খেলা রয়েছে যেসব খেলার জন্যই অনেকেই আজ বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয়। বিলিয়ার্ডও তেমনই একটি খেলা, ঠিকমতো প্রশিক্ষণ নিয়ে এই খেলাটি রপ্ত করতে পারলে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের প্রতিভাকে প্রকাশ করতে পারলে ক্যারিয়ারটা শুধু এই খেলা নির্ভরই চিন্তা করা যায়। তরুণ বয়সে অনেকেই এই খেলার প্রতি আগ্রহ থাকে। কিন্তু আগ্রহের তুলনায় ইচ্ছেটার প্রকোট ততটা থাকে না। তাই অনেকেই হয়তো শুধু চোখে চোখেই এর আগ্রহটা শেষ করে দেয়। যদি এই আগ্রহটাকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এটাকেও অন্যান্য সব পেশার মতো একটি পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া যায়। আমি এখানে শুধু বিলিয়ার্ডের ব্যবসার কথা বলছি না, একজন বিলিয়ার্ড খেলোয়াড়ের কথাও বলছি। ভেবে অনেক ভালো লাগে যে, আমাদের এসব বিলিয়ার্ড খেলার প্রতিষ্ঠান থেকে টুক-টাক করে শিখতে শিখতে আজ অনেকেই আন্তর্জাতিক মাঠে নিয়মিতই প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। আজ তারা তারকা। তবে হ্যাঁ, একটা সময় ছিলো আমরা টুর্নামেন্টের আয়োজন করতাম, কিন্তু প্রয়োজনমতো খেলোয়াড় পেতাম না। আর এখন তরুণদের এত আগ্রহ যে, তাদের আমরা প্রশিক্ষণ কিংবা খেলাবার জন্য ঠিকমতো জায়গাও দিতে পারছি না। আমাদের শহরের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই ছোটবড় বিলিয়ার্ড জোন রয়েছে। তারপরও খেয়াল করে দেখবেন সবক’টিতেই ছেলেরা খেলার জন্য লাইন দিয়ে বসে থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই ব্যবসা কিংবা খেলার ক্যারিয়ারটা সুষ্পষ্ট সম্ভাবনাময়। সবকিছুর মূলে আমি বলতে চাই যে, যেকোনো পেশা বা আগ্রহকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজে লাগালে অবশ্যই ভালো কিছু করা সম্ভব সবার পক্ষেই।
Leave a Reply