আমিরাত প্রতিনিধি :
আমিরাতে জাতীয় কবিতা মঞ্চের উদ্যােগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও একুশের কবিতা প্রতিযোগিতা রাজধানী আবুধাবিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও একুশের কবিতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার আরব আমিরাত সময়- ১০ টা ১ মি, বাংলাদেশ সময় -১২ টা ১ মি আবুধাবির রজনীগন্ধা খান সিআইপি হলে আমিরাত ও প্রবাসী লেখকদের ১৫টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
পরবাসে শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও প্রবাসী লেখকরা যেভাবে বই প্রকাশ করে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ‘ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে অর্জন করা হলেও এখনও পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে ভাষার শুদ্ধ প্রচলন দেখা যায় না।’ তাই বাংলা ভাষার প্রতি যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। প্রবাসের কঠিন কর্ম ব্যস্ততার মাঝে সাহিত্য চর্চা খুবই কষ্টসাধ্য ও দুর্লভ। তারপরও এই কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে যারা সাহিত্যকে বুকে ধারণ করে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে যাচ্ছেন তারা সাহিত্যাঙ্গনে জাতির জন্য এক একটি নক্ষত্র।
জাতীয় কবিতা মঞ্চ আরব আমিরাত কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও একুশের কবিতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব বলেন। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও একুশের কবিতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান শুভ উদ্বোধন করেন জাতীয় কবিতা মঞ্চ, সংযুক্ত আরব আমিরাত কেন্দ্রীয় কমিটির কবিতা বিষয়ক উপদেষ্টা,বরেণ্য কবি, জানে জাহাঙ্গীর আলম। জাতীয় কবিতা মঞ্চের সভাপতি,বরেণ্য কবি মুহাম্মদ মুসার সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট ব্যাংকার ও কলামিস্ট মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন ভুইয়া উপস্থাপনায় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি মোহাম্মদ মনির উদ্দিন মান্না, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, জাতীয় কবিতা মঞ্চ, সংযুক্ত আরব আমিরাত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আল সুমাইয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান, মিরসরাই সমিতি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সভাপতি, একজন বিজনেস আইকন, বিশিষ্ট শিল্পপতি, মানবতার কবি প্রতিষ্ঠাতা ফখরুল ইসলাম সিআইপি। প্রধান বক্তা ছিলেন- ইংরেজি সাহিত্যিক ডাঃ শামসুর রহমান পিএইডি, বিশেষ বক্তা ছিলেন, কথা- সাহিত্যিক মোহাম্মদ আক্তার উদ্দিন পারভেজ। ভাষা দিবসের উপর প্রবন্ধ পাঠ করেন কবি মির্জা মোহাম্মদ আলী, শহীদ স্মরণ কবিতা পাঠ করেন কবি জানে আলম জাহাঙ্গীর, কবি রাজু আহমেদ,কবি ফারুক হোসাইন, ইয়াকুব আহমেদ, হাবিব আহসান,আরাফাত হোসাইন প্রমুখ। আগত বক্তারা বলেন বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিক চর্চা বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে। মাতৃভাষার সংখ্যার বিচারে বাংলা ভাষা পৃথিবীর একটি শক্তিশালী ভাষা। একুশে ফেব্রুয়ারীতে শুধুমাত্র শহীদ মিনারে ফুল দিয়েই জাতি হিসেবে আমরা শহীদদের রক্তঋণ শোধ করতে পারব না। একটি সমৃদ্ধ ও সংস্কৃতিবান জাতি এবং শোষণমুক্ত দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সকল শহীদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
আমরা রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা আদায় করেছি। লাখো প্রাণের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতাও অর্জন করেছি। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও আমরা কতটুকু মুক্ত হতে পেরেছি? ভাষাকে তার কতটুকু প্রাপ্য সম্মান দিতে পেরেছি? আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে বাংলাভাষা আজ মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। বিভিন্নভাবে বিকৃত করা হচ্ছে ভাষাকে, ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলছে তার স্বকীয়তাকে। ভাষার এই করুণ দৃশ্য নিধনে দেশে এবং প্রবাসে গড়ে উঠুক ভাষা ও সাহিত্য চর্চা। নতুন প্রজন্ম থেকে উঠে আসুক লেখক, কবি, সাহিত্যিক আর পাঠক। ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
একুশে ফেব্রুয়ারী আমাদের জন্য যেমন একক অনন্য গৌরব ও আত্মোপলব্ধির দিন, তেমনি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রত্যেক বাঙালীর জন্যও এটি বিশেষ আবেগ-উদ্দীপনার দিন। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় একুশে ফেব্রুয়ারী আজ সকল জাতির মাতৃভাষার ঐতিহ্য ও মর্যাদাকে মূল্যায়নের বিশেষ বার্তা বহন করে।
Leave a Reply