নকশী বার্তা :
৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স, বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। বস্তুত এই ভাষণই পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। ভাষণটির তাৎপর্য এত গভীর ও সুদূরপ্রসারী যে, এটিকে ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। একই সঙ্গে এই কালজয়ী ভাষণটি ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল’ রেজিস্টারে সংরক্ষিত হয়েছে।
১৯৭১ সালের সেই উত্তাল দিনগুলোয় স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে উদগ্রীব মুক্তিকামী জনতার উদ্দেশে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেছিলেন- ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বস্তুত এ ভাষণেই বাঙালি জাতি তাদের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পেয়েছিল। সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। প্রকৃতপক্ষে ভাষণটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। শুধু বাঙালি জাতি নয়, ৭ মার্চের ভাষণ যে কোনো নিপীড়িত জাতির মুক্তির দিশা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার অনন্ত প্রেরণা। বিশেষত ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ভাষণটি বিশ্বের সর্বত্র এবং সর্বকালে মুক্তিকামী জনগণের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে লাখো মানুষের সম্মিলনে বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিট ধরে একনাগাড়ে উচ্চারণ করে গেছেন একেকটি প্রেরণাদায়ক শব্দ। তার দরাজ কণ্ঠে ফুটে উঠেছে বাঙালির ২৪ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস, অতঃপর বাঙালির কী করা উচিত তার দিকনির্দেশনা। সাধারণ মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় তিনি তাদের উজ্জীবিত করেছেন দেশপ্রেমে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন সাবধানবাণী। নিঃশঙ্কচিত্তে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক মহাবিদ্রোহী। ৭ মার্চের ভাষণের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল, বঙ্গবন্ধু এই ভাষণে কোনো হঠকারী বক্তব্য দেননি। তিনি এমনভাবে কথা বলেছেন, যাতে বাঙালি বিভ্রান্ত না হয়ে সুচিন্তিতভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে, অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকরা তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিতে না পারে। বস্তুত একটি বিদ্রোহাত্মক সময়ে এর চেয়ে উত্তম ভাষণ আর কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। এক কথায়- মর্মবস্তুতে, ভরাট কণ্ঠের ওঠানামায়, বাক্য বিন্যাসে, রাজনীতির কৌশলে এ ছিল এক অনবদ্য ভাষণ। এ ভাষণের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশে পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছিল। বাকি ছিল শুধু একটি মুক্তিযুদ্ধের অপেক্ষা।
৭ মার্চের ভাষণ আজ শুধু বাঙালির নয়, সমগ্র বিশ্বের এক অমূল্য সম্পদ। বিশ্বসভায় আমরা গর্বিত এ কারণে যে, আমাদেরই এক মহান নেতা এমন একটি ভাষণ দিয়েছিলেন যা হয়ে উঠেছে কালজয়ী। মহাকালের ধারায় যতদিন থাকবে বিশ্বসভ্যতা, ততদিন এ ভাষণের অবদান অক্ষুন্ন থাকবে- এ কথা বলা যায় নিশ্চিতভাবেই।
Leave a Reply