সম্পাদকীয় :
মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বাণী নিয়ে আবারও এলো রমজানুল মোবারক। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। মহান আল্লাহতায়ালা প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-সবল সব মুসলমান নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ করেছেন। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা এ তিন ধাপে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবে। কিন্তু এবারও রমজান এলো এমন একসময়ে যখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। যা থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ ১৩ কোটি ২৫ লাখেরও বেশি। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১০ রাকাত আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদুল হারামে এবার এতেকাফ ও ইফতারের আয়োজন বাতিল করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে সরকারও মসজিদে নামাজের আগে সভা-সমাবেশ না করতে এবং মসজিদে ইফতার ও সাহরিরর আয়োজন না করার আহ্বান জানিয়েছে।
এ মাসে মুসলমানরা তাদের দেহ ও আত্মা পরিশুদ্ধ করার সুযোগ পান। দীর্ঘ এক মাস সুবেহ সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার, ভোগবিলাস ও অসৎকর্ম হতে বিরত থেকে মোমিনরা রোজা পালন করে আত্মশুদ্ধি ও কৃচ্ছ্রসাধনে ব্রতী হন। কেবল পানাহার ও ভোগবিলাস থেকেই বিরত থাকা সিয়ামের শর্ত নয়, প্রকৃত সিয়াম সাধনা হচ্ছে সব ধরনের অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বিরত থাকা। এ শিক্ষা শুধু রোজার মাসের জন্যই নয়, বছরব্যাপী রোজার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। সিয়ামের মাধ্যমে আত্মিক ও নৈতিক উন্নতি ঘটে। লোভ-লালসা, হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে রোজার মূল চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। করোনার মতো দুর্যোগ থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে বারবার সেজদায় নত হবে। ক্ষমা চাইতে হবে নিজের পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য। রোজাদাররা ঘরে বসে তারাবিসহ সব ইবাদত করবেন এবং আল্লাহর কাছে করোনার মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য মোনাজাত করবেন। আমরা আশা করি, রমজানে ত্যাগ ও সংযমের চর্চায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনও আলোকিত হবে। কেবল ব্যক্তিগত ত্যাগ ও সংযম নয়; রমজানের অবশ্য কর্তব্যগুলো পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানের সঙ্গে যে যোগসূত্র নবায়ন করে নেয়, তার সামষ্টিক তাৎপর্যও ব্যাপক। রোজার মাধ্যমে শুধু পান, আহার ও জৈবিক চাহিদা বর্জনই নয়; আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য অন্তরের লোভ-লালসা ও নেতিবাচক চিন্তার লাগাম টেনে ধরতে হয়। রোজা অনুভব করায় ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট।
দুঃখজনক হলেও সত্য, রমজানের ত্যাগ ও সংযমের এই শিক্ষা অনেকের জীবনে প্রতিভাত হয় না। ত্যাগের বদলে ভোগ, কৃচ্ছ্রের বদলে অপচয়, অল্প আহারের বদলে ভূরিভোজ, মিতব্যয়িতার বদলে অপব্যয়িতার প্রতিযোগিতা দেখতে হয় আমাদের। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, করোনার কারণে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন। এক-আধপেটা খেয়ে নিদারুণ কষ্টে কাটছে তাদের জীবন। এ মুহূর্তে তাদের প্রতি আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও দায়িত্ব রয়েছে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর। গরিব-দুঃখীদের বিপদে তাদের সহায়তা দান রমজানেরই শিক্ষা। এ মাসে দেশের সব মুসলমান ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সবাই সচেষ্ট হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
Leave a Reply