1. mti.robin8@gmail.com : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. newsnakshibarta24@gmail.com : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. nakshibartanews24@gmail.com : nakshibarta24 :
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেসব কারণে বাড়ছে বজ্রপাত?

  • প্রকাশকালঃ রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১
  • ৩৬৯ জন পড়েছেন

নকশী বার্তা ডেস্ক : দেশজুড়ে বাড়ছে বজ্রপাত, বাড়ছে বজ্রঘাতে প্রাণহানী। গত কয়েক বছর ধরেই মানুষের জানমালের হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বজ্রপাত। গত এক দশকে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষ। চলতি বছর প্রাণহানীর সংখ্যা ইতোমধ্যে দুইশ’ ছাড়িয়ে গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল এই এগারো বছরে দেশে বজ্রপাতে মোট মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭৯ জন। ২০২০ সালে মারা বজ্রপাতে মারা গেছেন ২৯৮ জন। তবে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটেছে ২০১৮ সালে, ৩৫৯ জন। ২০১৭ সালে মারা গেছেন ৩০১ জন। ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১১ সালে ১৭৯ জন এবং ২০১০ সালে ১২৩ জন বজ্রপাতে মারা যান।

চলতি বছর এপ্রিলের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত দেড় মাসে বজ্রপাতে ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিলে ১১০ জন ও মে মাসে (১৯ মে পর্যন্ত) ৫৭ জন মারা গেছে। দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ডিজাস্টার ফোরামের সমন্বয়কারী মেহেরুন নেসা বলেন, গত দেড় মাসে বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা গেছেন সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং গাইবান্ধা জেলায়। আর বিভাগের হিসাবে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে সিলেটে। বজ্রপাতে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই খোলা মাঠে কাজ করছিলেন বা মাছ ধরছিলেন। কালবৈশাখীর কারণে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে এপ্রিল ও মে মাসে। বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ বলেও ডিজাস্টার ফোরামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ডিজাস্টার ফোরামের প্রতিবেদন মতে, বজ্রপাতের কারণে একজন মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে আশেপাশের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হিসাব। আর বজ্রপাতে আহতদের প্রায় সবাই স্থায়ীভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হাওর ও বিস্তীর্ণ বিল এলাকার জেলাগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা মাঠে যারা কাজ করেন, নৌকায় বা পথঘাটে চলাচল করেন, তারাই বজ্রপাতের শিকার হন বেশি। দেশে গত কয়েক বছরে বজ্রপাতের ঘটনা ১৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বে বাংলাদেশেই বেশি। প্রতিবছর বিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই ঘটে এ দেশে। কিন্তু বাংলদেশে বজ্রপাত নিয়ে কোন গবেষণা ও তা থেকে মৃত্যুরোধের কার্যকর জাতীয় কোন কার্যক্রম নেই। সীমিত পরিসরে বজ্রপাত সম্পর্কিত পুস্তিকা ও লিফলেট প্রকাশ এবং সেমিনার আয়োজন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাপমাত্রা ও বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, প্রচুর মোবাইল ফোন ব্যবহার ও এর রেডিয়েশন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট ও নদী দখলসহ নানা কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। বজ্রপাত বাড়ার সঙ্গে বিশ্বময় তাপমাত্রা পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

বজ্রপাত বাড়ার বেশ কিছু কারণের কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে অস্থিরতা সৃষ্টি। শীত মৌসুমে দেশে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত না হলে বায়ুমণ্ডলে অস্থীরতা তৈরি হয়। জ্বলীয় বাস্প প্রত্যাশিত স্তরে না থাকায় বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, শীতকালে সাধারণত উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়। আর শীতের পর তা দক্ষিণ দিক থেকে বইতে শুরু করে। এই বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জ্বলীয় বাষ্প থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা বেড়ে তাপীয় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এই লঘুচাপ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে মধ্যাঞ্চলে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ এসব এলাকায় বজ্রমেঘ তৈরি হয়। সেখান থেকেই বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। এ সময় আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। ওই মেঘের উচ্চতাও হয় অনেক বেশি।’

আবহাওয়াবিদদের মতে, বজ্র ঝড় শুরুর তিনটি ধাপ আছে। শুরুতেই বজ্রপাত হয় না। প্রথমে মেঘ তৈরি হতে থাকে এবং ওই সময় আকাশের অবস্থা খুব ঘন কালো হয় না। একটু কালো মেঘের মতো তৈরি হয়। সামান্য বৃষ্টি ও হালকা বিদ্যুৎ চমকের সময় যদি মানুষ সচেতন হয়; তবে মৃত্যুঝুঁকি কমতে পারে। তা ছাড়া পানি বিদ্যুৎপরিবাহী বলে বজ্রপাতের সময় পানির সংস্পর্শে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ।

বজ্রপাত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ‘বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক ঘটনা৷ আগেও হয়েছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটা বেড়ে গেছে৷ গত দুই-তিন বছরে গড়ে ৩০০-৪০০ লোক মারা গেছে৷ অতীতে এমন হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানত দু’টি কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে৷ এর ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন ও সময় পরিবর্তন হয়েছে৷ কালবৈশাখি বেশি হচ্ছে৷ আর বজ্রপাতের সংখ্যা বা পরিমাণ বেড়ে গেছে৷ অন্যদিকে আগে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর উঁচু গাছ ছিল৷ তাল গাছ, বটগাছ প্রভৃতি৷ সাভাবিক নিয়মে বজ্রপাত হলে এসব উঁচু গাছ তা অ্যাসজর্ব করে নিতো৷ কিন্তু এখন তা না থাকায় যখন খোলা মাঠে বজ্রপাত হয় তা মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ শহরে গাছ না থাকলেও উঁচু উঁচু ভবন আছে৷ ফলে শহরের মানুষ এই মত্যু থেকে রেহাই পাচ্ছে।’

ঘূর্ণিঝড়ের মতোই ভয়ঙ্কর একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত। একটি ঘূর্ণিঝড়ে যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটে, বজ্রপাতের কারণে তার চেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটতে পারে। গত ৫ বছরের পরিসংখ্যান তা প্রমাণ করে। ঘূর্ণিঝড়ে একই সময়ে একই জায়গায় অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে। আর বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ক্ষতির শিকার হয়। তাই বজ্রপাতের ভয়াবহতা খুব বেশি মানুষের চোখে পড়ে না।

মানুষ সচেতন হলে এ দুর্যোগ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সংবাদমাধ্যম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সুশীল সমাজ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মুক্ত আলোচনা থেকে জনসাধারণ সচেতন হতে পারে। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়তে হবে। বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, জানালা এবং বারান্দায় কাছাকাছি না থেকে দূরে থাকতে হবে। এ সময় বৈদ্যুতিক লাইন অর্থাৎ মেইন সুইচ বন্ধ রাখতে হবে এবং প্লাগগুলো খুলে ফেলতে হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বজ্রপাতের সময় বাইরে বের না হওয়া ভালো। বজ্রপাতের সময় ধাতব জাতীয় জিনিস, লোহা দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।

পাশাপাশি বাধ্যতামূলকভাবে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন করতে হবে প্রতিটি বিল্ডিংয়ে। তাতে বজ্রপাতের প্রকোপ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যাবে। তারের মাধ্যমে মাটির সঙ্গে আর্থিংয়ের সংযোগ দিতে হবে। বজ্রপাত নিয়ে আইডিইবির সদস্য প্রকৌশলীরা কাজ করছেন এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ইতোমধ্যে সরকার ১০ হাজার তালগাছ লাগিয়েছে।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম