1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন
৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীবনশিল্পী অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ

  • প্রকাশকালঃ বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৪২৬ জন পড়েছেন

ছবি : অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ।


মুহাম্মদ মহসীন চৌধুরী⇒

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রজন্ম নাট্যযোদ্ধা, ৬০ এর দশকে সরকারি চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনাকালে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে আলোচিত ব্যক্তিত্ব বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একাধারে শিক্ষক, গবেষক, আবৃত্তিকার, উপস্থাপক, নন্দিত নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও কলামিস্ট অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ। স্নাতকের শ্রেণী কক্ষে যাঁদেরকে সরাসরি পড়িয়েছিলেন অধ্যাপক মমতাজ স্যার প্রিয় শিক্ষক হিসেবে তালিকায় প্রথমদিকেই নাম তাঁর। তাঁর মতো একজন শিক্ষক, যিনি একই সঙ্গে সাহিত্য সংস্কৃতি শিল্প ও নাটককে ধারণ করতেন এবং ছাত্র বৎসল আচরণ দিয়ে শিক্ষর্থীদের মাঝে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দিতেন, যে কোন শিক্ষর্থীদের প্রিয় হওয়ার কথা, তা দেশেই হোক কি দেশের বাইরে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আজীবন লালন করেছিলেন। ১৮ জানুয়ারী ২০২৩ প্রিয় স্যার বরেণ্য নাট্যকার অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ এর ৮৯তম জন্ম দিনে বিনম্র শ্রদ্ধা।

অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ এক কথায় একজন সংবেদনশীল জীবনশিল্পী হিসেবে সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন পরিমন্ডলে তিনি অনুধ্যান সংযোজনে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে একটি অন্তর্লীন অভিজ্ঞানকে নির্ণয় করেছেন। চেতনার পালাবদলে তাঁর শিল্প-চৈতন্য আমাদেরকে সহসা-সচকিত করে তোলে। তিনি শুধু সময়কে আবিষ্কার করেননি, নির্মাণ করেছেন। তিনি তাঁর দ্বিতীয় ভূবনকে বাস্তবে অবলোকন করার প্রয়াসে সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণকে পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষন-নতুন পরিচয়ের নিরিখে লেখনী চালনা করেছেন। তিনি কলাম লেখেছেন, সাহিত্য সমালোচনার একটি বিশেষ ধারার প্রবর্তন করেছেন, এবং বিশেষতঃ নাট্যকলার সাথে সম্পৃক্ত সকল পরিসরে নিরঙ্কূশ মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর নাটকগুলো সর্বাংশে সামাজিক ও জাতীয় প্রয়োজনকে বিন্যাস করলেও নাট্যশিল্পের সার্বিক পরিপূরকতাকে তিনি উপস্থাপিত করেছেন। জাতীয় আন্দোলনের নিরিখে তিনি আত্মার ধ্বনিকে (Dialogue) এ’ প্রতিধ্বনিত করেছেন। সর্বাংশে তাঁর শিল্পীসত্তা প্রতিভাত থেকেছে। জনতার মঞ্চে তাঁর নাটকগুলো যেন জনতার চিদাকাশের নীল সামিয়ানার নীচে অভিনীত হয়েছে। তাঁর নাটকগুলোর মাল-মশলা জীবন থেকে নেয়া।

আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয় এই যে, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণের মালহার রচনা করতে গিয়ে মমতাজউদদীন আহমদ জীবনের দাবীকে কখনো ভোলেননি। অর্থাৎ শিল্পের জন্য শিল্পকে তিনি সমর্থন জানাতে পারেননি। সর্বাংশে বলবৎ থেকেছে (Letrature is the criticism of life) তবে নাটকের প্রতি তাঁর বিশেষ ঝোঁক দেখা গেছে। এর কারণ বোধ হয় এই যে, আমাদের দেশ নিরবতার অভিশাপ থেকে মুক্ত নয়। সাহিত্যের পান্ডিত্যের কাছাকাছি কয় জনই বা যেতে পারে। তাইতো তিনি নাটকের সাথে অভিনয়ের সম্পর্ক আছে বলে তিনি জীবনের কথাকে সকলের কাছে উপস্থাপিত করার প্রয়োজনে নাটক রচনার দিকে ঝোঁকেছেন। তাঁর বিভিন্ন প্রকারের সাহিত্যিক প্রয়াসে আমরা দেখেছি যে, তাঁর রচনায় সারল্য থাকলেও তরল নয়। তিনি একজন সব্যসাচী লেখক। মানুষ ও মানবিকতা শতধারে উৎসারিত থেকেছে। শাসন-শোষণের নির্মমতাকে তিনি প্রদর্শন করেছেন। তাঁর মানসিক সাহসিকতা ও উল্লেখের দাবী রাখে।

আমাদের দেশে সাহিত্য সমালোচনার ধারা আজও গড়ে ওঠেনি। সমালোচনার নামে শুধু পরিচিত-জনকে ঠেলে তোলা হয়। তেমনি কথা নাট্য সমালোচনার বেলায়ও আসে। সেই অভাবে বোধের কারণে বোধ হয় তিনি দীনবন্ধু মিত্র এর নীলদর্পন নাটকের সমালোচনা প্রকাশ করেছিলেন। চট্টগ্রাম কলেজের একটি বার্ষিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ছিল। তিনি জীবনবাদী নাট্যকার। জীবনকে জাগাতে হলে নাটক-মাধ্যমের উপযোগিতা তাঁকে আলোড়িত করেছে। জীবন-চৈতন্যের সম্ভাব্যতাকে তিনি প্রতিপন্ন করেছেন।

তিনি আমাদের কাছের মানুষ। জনজীবনের বহুমাত্রিক অনুষঙ্গকে তিনি অভিজ্ঞতার সঞ্চারে কলমে এনেছেন। মঞ্চ নাটকের স্মারকতার প্রতি তিনি নিবেদিত। এখানে চুপিচুপি একটি কথা বলা যায় যে, নাটক এবং চলচ্ছিত্র কখনো এক শ্রেণীর নয়। আমাদের টেলিভিশন-নাটকগুলোতে সেই পার্থক্য যে বজায় থাকছে, তা তো বলা যাবে না। তাইতো তিনি “কোয়ালিটি নাটক” এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

জীবনের ঝরা পাতাগুলোকে একত্র করে দাবানল সৃষ্টি করার মোক্ষম মাধ্যম হয়ে নাটক এসেছে। বোধ হয় সে কারণে তিনি নাট্যচর্চাকে বেছে নিয়েছেন। তাঁর ভাবনা অবশ্যই প্রাগ্রসর। পাখী যেমন ডিমে তা’ দেয়, দৃষ্টি থাকে সুদূরর স্মারকতায়, তেমনি তিনি সমকালের পরিপোষকতা করলেও একটি উপভোগ্য সময়ের প্রেক্ষিতকে স্বপ্ন-সাধে নিরীক্ষণ করেছেন। জীবনের শতদলকে বিন্যাসিত করেছেন। জাতীয় মুক্তির সুন্দর আয়োজনে উর্মিত থেকেছেন। এ যে অনবরত চলার ছন্দ। তিনি মুক্তিবুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তা চর্চার পথে এগিয়ে চলেছেন। তাঁর কাছ থেকে আমরা চেতনার সত্যপাঠ নিতে পারি।

যদিও বা তিনি একজন নাট্যকার হিসেবে আলোচন্যমান থাকছেন, তবু লেখনীর সাবলীলতায়, শিল্পের কৌলিণ্যে, আঙ্গিকের নিত্যনতুন অভীপ্সায় তিনি অনন্য।

তিনি কোন রূপ সস্তা জনপ্রিয়তার গড্ডালিকা প্রবাহে কখনো গা ভাসিয়ে দেননি। তিনি তাঁর চেতনার চলমানতায় কখনো টাকা-আনা-পাই এর চাকা দেননি। সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিক্রমায় বণিক বৃত্তিকে তিনি কখনো প্রশ্রয় দেননি। জীবন-বিচিত্রার প্রতি এক ধরনের নিজস্ব কৌতুক বোধ তাঁর লেখনীকে শাণিত করেছে। তাকে জীবন-জিজ্ঞাসু করেছে।

একটি তলিয়ে দেখলে বুঝা যায় যে, তাঁর সন্নিবেশিত সরল বাক্যগুলোও কোন কোন সময়ে বড়ই জিজ্ঞাসু। তিনি পরম মমতায় চলমান জীবনের প্রতি প্রশ্ন-প্রজ্ঞাপন করেছেন। শুধু উষমা প্রদর্শন করে কর্তব্য শেষ করেননি। তিনি বিদেশী নাটকেরও দেশীয়-পরিচ্ছদ প্রতিপন্ন করেছেন। তাঁর চিন্তার পরিধিতে আমরা কোন রূপ ঘেরা-বেড়া দেখি না।

দক্ষ নাট্যকারদের নাটকের কুশীলবগনও অনেকখানি স্বাধীন। কুশীলবগণের নিজস্ব গতিতে তথা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় নাট্যকারকে নৈর্ব্যাক্তিক থাকতে হয়। কোন একটি চরিত্র যদি অপরটিকে গালি দেয়, তাইতো সেই দোষে নাট্যকারকে অভিযুক্ত করা যায় না। এ যে গণতান্ত্রিক জীবনবোধ, নাট্যকারের মধ্যে থাকতে হয়। জাতীয় দুর্দিনের নিরিখে রচিত মমতাজউদদীনের নাটকগুলোতে আমরা সেই গণতান্ত্রিক জীবনবোধকে পাই। কয়েকেটি ফুল ছিঁড়ে একটি বাগানের সৌন্দর্যকে দেখানো যায় না। তাইতো তাঁর সাহিত্য-চর্চার বিভিন্ন নিরিখ সম্পর্কে আমাদের সাক্ষাৎ অনুধ্যানের যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। পরিচয়েই মূল্যবোধের কথা আসে।

একটি ফুলের মালায় সুতো যেমন সংগোপনে থাকে, তেমনি একজন দক্ষ আবেদনশীল নাট্যকার হিসেবে তিনি সৃষ্ট চরিত্রগুলোর প্রতিভাসে জীবনের সমালোচনা করেছেন। আমরা সাধারণতঃ সমালোচনা বলতে নিন্দাবাদ হিসেবে ধরে নেই। সমালোচনার যথার্থতা হচ্ছে সঠিক মূল্যায়ন, গতি ও প্রকৃতি নির্ধারণ। তাঁর লেখা নাটক “স্বাধীনতা সংগ্রাম”, স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা”, “কী চাহ শঙ্খচিল” ইত্যাকার নাটকে তিনি স্বাধীনতার স্বরূপকে সন্ধান করেছেন। কেমন করে বাঁচতে হয়, তাও এসেছে। শুধু বিহবলতা প্রকাশ করে ক্ষান্ত হন নি। নাটকে তিনি ‘মজদুর’ এর ভূমিকা পালন করেছেন বললেও অত্যুক্তি হয় না।

আমাদের জীবন বিচিত্রার দ্বান্ধিকতা আছে। আমার শ্রেণী বিভক্ত সমাজে বাস করছি। সেই দ্বান্ধিকতাকে যেন তিনি নাটকের (Dialougue) এ কৌতুক প্রিয়তায় যাচাই করেছেন। বিপ্লব তীর্থ চট্টগ্রামের তিনি বাসিন্দা। তিনি অবশ্যই জানেন যে, স্বদেশী আন্দোলনের উর্মি জেগেছিল যাত্রাগানের আসর থেকে। যাত্রাভিনয়ের ফাঁকে কোন এক দর্শককেও দেখা গেছে যে, নিরক্ষর উচ্চারণে মঞ্চে ওঠে হঠাৎ চীৎকার করে বলে ওঠেছে – বন্ধে মাতরফ। আমাদের বিগত স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাঁর রচিত নাটকগুলোর প্রবর্তনায় আমরা তাঁর সেই উত্তরাধিকার খেয়ালকে দেখি। তাঁর প্রয়াস যেন কালের যাত্রার ধ্বনি। সেই আবেদন কখনো নিঃশেষ হবার নয়। তাইতো তাঁর চেতনা সময়কে অতিক্রম করে গেছে বলা যায়। এখানে আমরা শওকত ওসমান এর একটি উচ্চারণের স্মরণ নিচ্ছি, “ কালি-কলম-মন/লেখে তিনজন”।

ঋদ্ধ সাহিত্য-সাধনের বয়স কখনো ফুরোয়না। সাহিত্য যেখানে সাধনা হয়ে আসেনা, সে পরিসরে লেখকের বিস্তার সূর্যের মতো। তাইতো লেখলেই লেখক হওয়া যায় না। মমতাজউদদীন আহমদ সাহিত্যের বিচারে একজন সুলেখক। তাঁর লেখকবৃত্তি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সেই উজ্জ্বল-উদ্ধারে আমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে। তিনি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে নাট্যচর্চা করেছেন। তিনি একটি বৃত্তে ঘুরপাক খাননি। এক একটি নাটকের মাধ্যমে তিনি (Step by Step) এগিয়ে গেছেন। তিনি জীবন-বিচিত্রাকে কেলাসিত করেছেন।

তিনি যদিও বা বিশেষ পরিচিতিতে লব্ধপ্রতিষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছেন। তবুও একজন লেখক হিসেবেও সাহিত্য পরিক্রমায় অন্যান্য পর্যায়ে তাঁর অবদান কম নয়। এতদ্বিষয়ে ও বিচার-বিশ্লেষন তথা মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে। তিনি বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী। সর্বাংশে তিনি একজন সাহিত্যশিল্পী তথা জীবনশিল্পী।

বিবেকের পরিচর্যায় তিনি যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। জনস্বার্থের নিরিখে একটি প্রতিবাদী কন্ঠ। বিভিন্ন গণ আন্দোলনে এগিয়ে এসেছেন। তিনি একজন মানবতাবাদী লেখক। হিসেবের পাওনা আদায়ে দ্রোহী চেতনার পরিপোষকতা করেছেন। তাঁর লেখায় অজস্র যে শব্দের সাথে হাত মেলায়েছেন, শব্দ-সমুদ্র ও জীবনের ঘামে ভেজা।


লেখক =

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন রেজিষ্টার্ড গ্রাজুয়েট এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক।

 

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম