এম. রহমান (আরিফ)
বর্তমানে ই-কমার্স সেক্টরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ইভ্যালী, কিছু পত্রিকায় ইভ্যালী বিষয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সারাদেশে বিশেষ করে ই-কমার্স সেক্টরে যারা জড়িত তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে বিষয়টি। বাংলাদেশ ই-কমার্স সেক্টরে অনেকখানি অগ্রগামী হলেও পণ্যের ত্রুটি, অনিয়ন্ত্রিত মূল্য, ডেলিভারি সমস্যা, পেমেন্ট সমস্যা জনিত কারনে কিছুটা বাধাগ্রস্ত এই ই-কমার্স ব্যবসা। তবুও লড়াই চলছে ভালো কিছুর জন্য।
একেবারে মূল বিষয়ে আসি, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বিষয়টি বাংলাদেশে এমনকি এশিয়ার অনেকগুলো দেশে বিতর্কিত ও সমালোচিত। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোতে খুবই সমাদৃত। এর পেছনে অনেক কারন রয়েছে যার অন্যতম হলো এটির অপপ্রয়োগ ও ভুল ব্যাখ্যা। মূল ধারা থেকে সরে গিয়ে শুধুৃমাত্র বিনিয়োগ ও আয়ের মাধ্যম হিসেবে এটিকে বেছে নেয় বিধায় এটি অনিশ্চিয়তায় পড়ে। ডেসটিনি, ইউনিপে, গ্লোবাল গেইনসহ বেশ কিছু কোম্পানি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং বা ডিরেক্ট সেলিং এর বেসিক ক্রাইটেরিয়া হলো এখানে অবশ্যই স্পন্সরশীপ বা রেফারেল থাকবে অর্থাৎ সেলস কমিশন বা বোনাসগুলো অনেকটা চেইনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। সেলস টীম এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন পুরনো ক্রেতা নতুন ক্রেতা তৈরী করার কারণে নতুন ক্রেতার ক্রয়কৃত পণ্যের উপর কমিশন পেয়ে থাকে। ইভ্যালীতে আমার জানা মতে এমন স্পন্সরশীপ বা রেফারেল সিস্টেম নেই।
ই-কমার্স সেক্টরে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক বেশি কার্যকর ও প্রগ্রেসিভ। কিন্তু মাল্টি-লেভেল ও অ্যাফিলিয়েট ভিন্ন কৌশল। সহজ কথায় অ্যাফিলিয়েট ইনডিভিজুয়াল পলিসি অন্যদিকে এমএলএম টীম বা গ্রুপ পলিসি। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রণ আইন হয়েছে এবং উক্ত আইনের বিভিন্ন ধারায় এমএলএম এর ব্যবসায় পদ্ধতি, নিয়মনীতি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে একই সাথে অনিয়ম ও দূর্নীতির জন্য শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দোষী ব্যক্তি এ আইনে বিচারাধীন রয়েছে।
সবচেয়ে আশংকাজনক বিষয় হলো যখনই দেশে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দূর্নীতি, অনিয়ম অথবা অর্থ পাচারের ঘটনায় জড়িয়ে যায় তখনই এটিকে এমএলএম বলে চালিয়ে দেয়া হয়। এটা অপরাধ বা বিচারকে ভিন্ন দিকে পরিচালিত করার কৌশল। এর কারণ দেশের অন্যান্য আইনের চেয়ে এমএলএম আইন নতুন এবং দূর্বল। এমএলএম নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও এটিকে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করার কোন সংস্থা আজ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে কমিশন সিস্টেম থাকলেই সেটিকে এমএলএম বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
যাইহোক আমাদের তখনই টনক নড়ে যখন পত্রিকায় শিরোনাম হয়। বিচার বিশ্লেষণ না করে একটা প্রতিষ্ঠানকে প্রতারক বানিয়ে মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন কিছু পত্রিকার বৈশিষ্ট্য হয়ে দাড়িয়েছে। ই-ক্যাব যেহেতু একটি জনপ্রিয় ও বৈধ সংস্থা ই-ক্যাব এর মাধ্যমে ইভ্যালীর বিষয়ে তদন্ত ও যাচাই-বাছাইয়ের পর পত্রিকাগুলোতে সংবাদ পরিবেশন করা উচিত ছিল। এর আগেও অনেক প্রতিষ্ঠান এভাবে বন্ধ হয়েছে কিন্তু মালিক বা পরিচালকরা কোন না কোনভাবে সাজা ভোগ করে অথবা আইনের মারপ্যাচে বেরিয়েছে। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠানের হাজার কর্মচারী, হাজার স্বপ্ন, সম্ভাবনা ভেঙে চুরমার হয়েছে।
একটা প্রতিষ্ঠান কিভাবে ১০০-১৫০% ক্যাশব্যাক দেয় এটা তাদের ব্যবসায়িক কৌশল হতে পারে। এটার ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই ইভ্যালীর কাছে আছে এবং এটা যদি সন্দেহজনক ও অনিয়ম হয় তাহলে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। এমনতো নয় যে পণ্যের বিপরীতে টাকা নিয়ে পণ্য দিচ্ছে না, এটা ঠিক যে পণ্য ডেলিভারিতে বেশি সময় নিচ্ছে, অনেক পণ্য মিসিং হচ্ছে, ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয়, বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টরের এটা হরহামেশা ঘটছে। এসব সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, সেলার, ও ক্রেতা/গ্রাহক প্রত্যেকের জন্য নিরাপদ একটা প্লাটফর্ম গড়ে তোলতে কিছু সংস্থা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আর অন্যদিকে কিছু পত্রিকা মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন এর জন্য এই সেক্টরের সাথে এমএলএম শব্দটি জুড়ে দিয়ে শুধু অপরাধ করেনি বরং ই-কমার্সের সম্ভাবনায় একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
আইনসঙ্গত, নিয়মতান্ত্রিক ও ক্রেতাবান্ধব একটা ই-কমার্স সেক্টর গড়ে তোলার জন্য যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।
কর্মসংস্থান ও ক্রেতা সন্তুষ্টির প্রাণকেন্দ্র হোক আমাদের ই-কমার্স সেক্টর।
Leave a Reply