নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি : আব্বু তোমার বড় ভাই জোনায়েদ হোসেনকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে আসবো। তুমি ভালো করে লেখাপড়া করবে। তোমার ভাই এখন থেকে গ্রামের বাড়িতে থাকবে। সেখানে থেকে লেখাপড়া করবে।’ বাবার মুখে শোনা এসব কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ দেলোয়ার হোসেনের সেজো ছেলে জাকারিয়া (১৩)।
শুক্রবার জুমার নামাজের আগে নারায়ণগঞ্জ তল্লা সর্দার পাড়া বায়তুল সালাহ জামে মসজিদে পিতা ও ভাইয়ের সাথে শেষ বারের মতন কথা হয়। শনিবার আব্বু, ভাই আর আমি এক সাথে বাড়িতে আসবো। এ সিদ্ধান্ত শেষে জাকারিয়া তার মাদ্রাসায় চলে আসে। তাদের আর বাড়িতে যাওয়া হলো না। চলে গেলেন পরপারে।
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ তল্লা সর্দার পাড়া বায়তুল সালাহ জামে মসজিদে এশার নামাজ চলাকালে এসি বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয় মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ দেলোয়ার হোসেন (৪৭) ও তার বড় ছেলে জোনায়েদ (১৭)। পরে তাদের উদ্ধার করে অন্যান্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এ ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২ টা ৩০ মিনিটের সময় হাফেজ দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে শনিবার সকাল ১০ টায় নিহতের বড় ছেলে জোনায়েদেরও মৃৃত্যু হয়।
নিহত হাফেজ দেলোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর। সে ওই গ্রামের হাজী বাড়ির মৃত. শফিকুর রহমানের ছেলে।
শনিবার বিকেলে নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, হাফেজ দেলোয়ার হোসেনের ৩ মেয়ে সুমাইয়া আক্তার, সুরাইয়া আক্তার, ফাইজা ও ২ ছেলে জোনায়েদ হোসেন, জাকারিয়া ও এক স্ত্রী নিয়ে বসবাস। তিনি গত ১৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের ওই মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ভালো লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে ৮ বছর পূর্বে তার ২ ছেলে জোনায়েদ হোসেন ও জাকারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যান। নিহত জোনায়েদ ওখানকার স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় হাদিস লাইনে ৭ম শ্রেণিতে ও তার ভাই জাকারিয়া ২য় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।
শনিবার রাতে গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে নিহত হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলে জোনায়েদের দাফন করা হবে বলে জানা যায়।
Leave a Reply