1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০১ অপরাহ্ন
১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার এবং জনগণের জন্য সরকার

  • প্রকাশকালঃ সোমবার, ১৮ মে, ২০২০
  • ২২৯ জন পড়েছেন

১৮৬৩ সালে সমগ্র আমেরিকা গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। বর্ণবাদ, রক্ষণশীলতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং ধর্মীয় মতভেদসহ নানা কারণে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে গৃহযুদ্ধ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আমেরিকার এ ক্রান্তিকালে দেশের ১৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কৃষাঙ্গ নেতা আব্রাহাম লিংকন এক সংকটময় সময় অতিবাহিত করেন। ১৮৬১ সালে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ২ বছরের মাথায় ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্তির প্রশ্নে আমেরিকা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আব্রাহাম লিংকন এবং তার সমমনারা ছিলেন ক্রীতদাস প্রথার বিরুদ্ধে। এ পক্ষ তাদের আদর্শ এবং বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে একটি জোটবদ্ধ সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন, যা ‘ইউনিয়ন আর্মি’ নামে পরিচিতি পায়। আর অপরপক্ষে ছিল আমেরিকার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যসহ দক্ষিণাঞ্চলের সৈন্যরা, যারা ‘কনফেডারেট আর্মি’ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৬৩ সালের জুনের শেষে কনফেডারেট আর্মির কমান্ডার জেনারেল রবার্টই লি’র নেতৃত্বে আনুমানিক ৭৫ হাজার সৈন্য আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের গেটিসবার্গ শহর আক্রমণ করে। আর গেটিসবার্গের দখল ধরে রাখতে রুখে দাঁড়ায় ইউনিয়ন আর্মি কমান্ডার জেনারেল জর্জ জি মিয়াদির লক্ষাধিক সৈন্য। জুলাই মাসের ১, ২ ও ৩ তারিখে উভয়পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ যুদ্ধে ইউনিয়ন আর্মির ৩ হাজার ১৫৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। ১৪ হাজার ৫২৯ জন আহত হন এবং ৫ হাজার ৩৬৫ জন অপরপক্ষের হাতে যুদ্ধবন্দী হন। পক্ষান্তরে কনফেডারেট আর্মির হতাহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪ হাজার। আমেরিকার ইতিহাসে কোনো গৃহযুদ্ধে এমন হতাহতের ঘটনা এর আগে কখনোই ঘটেনি। ফলে শান্তিপ্রিয় মানবদরদি ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী কৃষ্ণাঙ্গ নেতা ও প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার পরপরই ছুটে যান গেটিসবার্গ শহরে। সেখানে দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী সেনাদের সম্মানে ও স্মৃতিতে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ‘সোলজার্স ন্যাশনাল সিমেট্রিতে’ শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক আবেগময় এবং ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকা এ ভাষণটি উচ্চারিত হয় ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকার জন্ম এবং সার্থকতা তুলে ধরতে তথা গণতন্ত্রের প্রকৃত সংজ্ঞা নিরূপণে তার এ ভাষণ আজও সর্বজন গৃহীত ও বিদিত। মাত্র ২৭১টি শব্দে তিনি আমেরিকার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের এক অসাধারণ ব্যঞ্জনা প্রকাশ করেন। তিনি এ ঘটনার ৮৭ বছর আগে আমেরিকার রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের নেপথ্যের ‘সমতা’ ও ‘সমানাধিকার’-এর বিষয়টি তুলে ধরেন এবং তা বজায় রাখতে যুগে যুগে বিশেষত গেটিসবার্গের ৩ দিনের যুদ্ধে যে বিপুলসংখ্যক সেনা হতাহত হয়, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। তার বক্তব্যের শেষ ভাগে উচ্চারিত হয় ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে তার আন্তরিক আশাবাদ। তিনি বলেন, ‘‘….Government of the people, by the people, for the people ” অর্থাৎ পৃথিবীর বুক থেকে জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার এবং জনগণের জন্য সরকার কখনো হারিয়ে যাবে না। এ ভাষণের পর আরও ২ বছর আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চললেও পৃথিবীব্যাপী জনগণের সরকার তথা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এ ভাষণ বিশেষ অবদান রাখে। এই বক্তব্যের মাধ্যমেই যেন পৃথিবীতে আধুনিক গণতন্ত্রের বীজ রোপিত হয়। সব রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তার এ উক্তিকে গণতন্ত্রের সঠিক ও সার্বিক সংজ্ঞা বলে একবাক্যে স্বীকার করেন। তার এ বক্তব্যে উদ্ধুদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রপ্রেমীরা সারা বিশ্বে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে একে একে স্বৈরাচার ও রাজতন্ত্রের পতন ঘটতে থাকে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে। তাই বলা হয় পৃথিবীর বুকে দাস প্রথার অবসান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বীজ ১৮৬১ সালের ১৯ নভেম্বর আব্রাহাম লিংকনের হাতে গেটিসবার্গে রোপিত হয় মাত্র ২৭১টি শব্দ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। এ ভাষণ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদকৃত অন্যতম ভাষণ। ১৯৭২ সালে ‘দি লিবার্টি অব কংগ্রেস’ পৃথিবীর ২৯টি বহুল প্রচলিত ভাষায় অনুবাদকৃত এ ভাষণের একটি সংকলন প্রকাশ করে।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম