অরবিন্দ দাস, নাঙ্গলকোট :
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এল জি ই ডির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে প্রায় ২০টি ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলাকাবাসীকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত প্রায় দুই বছর থেকে ব্রিজ-কালভার্টগুলো ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এলজিইডি থেকে ব্রিজ-কালভার্টগুলো নির্মাণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কে চারটি ব্রিজ ও জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কে তিনটি ব্রিজ সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ ও কালভার্টগুলো দিয়ে যাত্রীবাহি মাইক্রোবাস, এ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, মালবাহী ট্রাক, পিকআপভ্যান, মোটরসাইকেলসহ ছোট-বড় যানবাহনকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ব্রিজ-কালভার্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই এলাকার প্রায় এক লাখ মানুষকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে ডাকাতিয়া নদী ও শাখা খালের উপর নির্মিত বিভিন্ন সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্টগুলো ঘুরে বিভিন্ন যানবাহন ও এলাকাবাসীকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজগুলোতে ব্রিজের রেলিং নেই, ব্রিজে যানবাহন উঠলে ব্রিজ কেঁপে উঠে, কোথায়ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজে স্টীলের পাত, সিমেন্টের ঢালাই, কাঠ ফেলে কোনভাবে বিভিন্ন যানবাহন ও যাত্রীদের যাতায়াতের উপযোগী করা হয়েছে। আবার কোন-কোন ব্রিজের উপর হেঁটে যাতায়াত এবং যাবনাহন উঠার ব্যবস্থা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজগুলোতে বিভিন্ন যানবাহনকে ধাক্কা দিয়ে ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে পার হতে দেখা যায়।
উত্তর সাতবাড়িয়া গ্রামের রমজান আলী, কবির আহম্মেদ, নাইয়ারা ও চৌকুড়ি গ্রামের ইসমাইল, আবদুল মতিন, বলেন, গত প্রায় দুই বছর থেকে উত্তর সাতবাড়িয়া ও নাইয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ দিয়ে ছোট, বড় যানবাহন এবং এলাকাবাসীকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতাযাত করতে হচ্ছে। ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনায় জীবনহানির আশংকা রয়েছে। তারা দ্রুত ব্রিজগুলো পুনঃনির্মাণের দাবি জানান।
জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্টগুলো গত ২৫/৩০বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়। গত দুই বছর থেকে ব্রিজ-কালভার্টগুলো ভেঙ্গে পড়ায় এলাকাবাসীকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইতিপূর্বে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) প্রধান কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্টগুলো নির্মাণে বার-বার তথ্য প্রেরণ করা হলেও দীর্ঘদিনেও ব্রিজ-কালভার্টগুলো পুনঃনির্মাণ করা হয়নি।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বক্সগঞ্জ-বড়কালী-সাতবাড়িয়া সড়কের ডাকাতিয়া নদীর শাখা খালের উপর সাতবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন উত্তর সাতবাড়িয়া ব্রিজ, সাতবাড়িয়া-চৌকুরী-শিহর বাজার সড়কের ডাকাতিয়া নদীর উপর সাতবাড়িয়া ব্রিজ, একই সড়কের নাইয়ারা ব্রিজ, সাতবাড়িয়া-রঘুনাথপুর বাজার ভায়া তপোবন সড়কে খালের উপর সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন ব্রিজ, মলংচর-বাসডাঙ্গা-বৈরাগী সড়কে বাসডাঙ্গা খালের উপর বাসডাঙ্গা ব্রিজ, আদ্রা ইউপি-মানিকমুড়া বাজার সড়ক ভায়া ভোলাইন ও ঘোড়াময়দান সড়কে খালের উপর ঘোড়াময়দান ব্রিজ, নাঙ্গলকোট জিসি-লুদুয়া আরএইচডি ভায়া মেরকোট বাজার সড়কে খালের উপর লুদুয়া পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন ব্রিজ, বাইয়ারা-মানিকমুড়া সড়কের দুয়ারিয়া নামকস্থানে খালের উপর ব্রিজ, একই সড়কে এক কিলোমিটার দুরে আরেকটি ব্রিজ, ঢালুয়া-চাঁন্দগড়া-চডিয়াবাজার সড়কে চাঁন্দগড়া ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে প্রায় ৮/১০টি ছোট কালভার্ট ভেঙ্গে পড়ায় এলাকাবাসীকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে মাহিনী-লক্ষিপদুয়া সড়কের তালতলা কালভার্ট, উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের বটতলী- রাজারবাগ সড়কের কালভার্ট, মানরা-ভবানিপুর সড়কের মানরা বাজার থেকে পূর্ব দিকে সাবেক ইউপি সদস্য খালেকের বাড়ি সংলগ্ন কালভার্টসহ ৮/১০টি কালভার্ট দীর্ঘদিন থেকে ভেঙ্গে যাওয়ায় ছোট-বড় যানবাহনসহ এলাকাবাসীকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল হক বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে ডাকাতিয়া নদী ও শাখা খালের উপর উল্লেখিত প্রত্যেকটি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলাকাবাসীকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছোট-বড় যানবাহনসহ এলাকাবাসীকে যাতাযাত করতে হচ্ছে। ব্রিজ-কালভার্টগুলো নির্মাণ হলে যাতায়াত ব্যবস্থা সচল হবে। উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কে একশ মিটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ব্রিজ-কালভার্টগুলো নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন ব্যয় তৈরী করে এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট-ছোট ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্টগুলো উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে।
Leave a Reply