বাপ্পি মজুমদার ইউনুস :
পিচঢালা পথে নয়, ধুলা ওড়া মাটির পথ দিয়ে স্কুল থেকে কলকলিয়ে বাড়ি ফিরছে কচিকাচার দল! পড়ন্ত বিকেলে অসাধারণ মনমাতানো দৃশ্য! সকল শিশুর নিষ্পাপ চোখে কিলবিল করছে বড় হওয়ার অদম্য ইচ্ছা! শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী হিসেবে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্ন! এই শিশুদের বাড়ি ডাকাতিয়া নদীর চারপাশে। আর তাদের মনে এমন আশা জাগাচ্ছেন স্বপ্নাতুর একজন মানুষ—ময়ূরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কবি ও গণমাধ্যম কর্মী, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, আত্মমানবতার সেবায় নিয়োজিত একজন আলোকিত পথের কান্ডারী তাজুল ইসলাম। সবার মুখে যারা নাম তাজু স্যার। এ নিরহংকার ব্যক্তিটি কে নিয়ে দু চারটি লাইন লেখার আল্লাহ তৌফিক দিয়েছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করছি। যে মানুষটিকে পিতার আসনে বসিয়েছি, তাকে নিয়ে দু-চারটি লেখা লিখতে পারা সৌভাগ্যের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যার ভক্ত ও শুভাকাঙ্খীদের মিছিল অনেক বড়। তিনি একজন শিক্ষক হয়েও নানান বিষয়ে নানান সমস্যায় জর্জরিত লোকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সাহিত্য অঙ্গনে যার অবাদ বিচরণ, তিনি একজন সব্যসাচী।
আদিকাল থেকেই চলে আসছে সাদা আর কালোর পার্থক্য । জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডে মানুষের সাদা-কালো মনের পরিচয় সহজেই মেলে। ভাল কাজ যেমন মানুষকে আনন্দ দেয় তেমনি মন্দ কাজ করে ব্যাথিত। বর্তমান এ সভ্য সমাজে কালো মানুষের সংখ্যা যেন বেড়েই চলছে! সমাজের প্রতিটি শাখায় কালো মানুষগুলোর জয়জয়কার ! পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানেই তাদের কর্তৃত্ব ! কালো মানুষ নামের এ দানবগুলোর হিংস্র থাবায় সমাজের সাদা নরম হৃদয়ের মানুষেরা আজ নিষ্পেষিত। আমাদের এ সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক সাদামনের আলোকিত মানুষ। তাদের কর্মের মাঝে তারা যেমন নিজেদের করেছেন আলোকিত তেমনি তাদের ছোয়ায় অন্যরা খুঁজে পেয়েছেন আলোর পথ।
মানুষ গড়ার কারিগর নরম হৃদয়ের এ মানুষটিকে হয়তো আমরা অনেকেই চিনি শুধুই একজন স্কুল শিক্ষক হিসাবে । কিন্তু তার ভিতরে রয়েছে অন্য আরেক মানুষ ! যা আমাদের অনেকের অজানা। মুক্ত চিন্তার অধিকারি এ মানুষটি একাধারে একজন কবি, গীতিকার, সংগঠক, সাংবাদিক ও আদর্শ শিক্ষক। বর্তমানে তিনি উপজেলার ময়ূরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
আলোকিত এ মানুষটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কে শ্রম-ঘাম মেধা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলায় বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে স্বর্ণশিখরে এসে দাঁড়িয়েছেন। নাঙ্গলকোট প্রবাসী কল্যাণ ইউনিট, প্রবাসের আলো, সবুজ দিগন্ত বাংলাদেশ, ভয়েজ অব হিউমিনিটিসহ নানান সংগঠনে থেকেই তিনি আত্ম মানবতার সেবা করে যাচ্ছেন।
আপনাদের এই আলোকিত মানুষটির গল্প বলি আনন্দে!
কারও প্রশংসা বা বন্দনা নয়! খ্যাতি পাওয়ার বাসনায় নয়, অন্যকে অনুপ্রানিত করতে আজকের এই লেখা আমার।
কলুষিত এবং স্বার্থন্বেষী সমাজব্যবস্থায় কিছু আলোকিত, পরোপকারী লোক সমাজে আছে।তাই আজ ও সমাজব্যবস্থা টিকে আছে।তাদের মধ্যে তিনি একজন। একেবারে সাধারণ থেকে উঠে আসা একজন সফল ব্যাক্তিত্ব তিনি। তরুণ বয়স থেকে যে নির্ভিক, সত্য এবং আলোর পথের যোদ্ধা। আমার নিজের চোখে দেখা সত্যের পথে আপোষহীন, মিথ্যা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর মনোবাসনা নিয়ে এগিয়ে চলা একজন মানুষ । একেবারে সরলমনা, সৎ এবং নিরঅহংকার প্রকৃতির মানুষ তিনি।যারা কাছ থেকে তার সাথে মিশেছেন তারা হয়ত এই মানুষটির আর ও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য জেনে থাকবেন।
মানুষ যখন মানুষকে ব্যবহার করে অর্থ এবং ক্ষমতায় আসীন হতে সচেষ্ট তখন এই মানুষটি কিছুটা ব্যাতিক্রম। ব্যাবসা এবং শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত আছেন তিনি। অন্যের কল্যানে নিজের সাধ্যানুযায়ী সব কিছু উৎসর্গ করতে ব্রতী এই মানুষটি। এই মহৎ হৃদয়ের মানুষটি সমাজের কিছু ভাল মনের মানুষকে একত্রিত করে গড়ে তোলেন সামাজিক একতা।
আমাদের পরিচয় সাহিত্য অঙ্গনে। কবি ও সাংবাদিক আজিম উল্লাহ হানিফের মাধ্যমে উনার সাথে পরিচয় হয়। প্রথম যেদিন দেখা হয়, উনার মিষ্টিভাষী এবং বন্ধুসুলভ আচরণ মুগ্ধ হয়েছি। নাঙ্গলকোট জেলা বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের সাথে সংযুক্ত হয়েও তিনি বিভিন্ন দাবি দাবা উপস্থাপন করেছেন। নাঙ্গলকোটের সাহিত্যিকদের আশ্রয়স্থল নাঙ্গলকোট রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সফল সভাপতি ছিলেন। ওনার হাত ধরে সাহিত্যাঙ্গনের অনেক দিক উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। নাঙ্গলকোট সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা এবং নাঙ্গলকোট উপজেলার প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক আমাদের নাঙ্গলকোট পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ কবি ফোরাম কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। উনার কর্মপরিকল্পনা গুলো এত অল্প সময়ে তুলে ধরা কষ্টসাধ্য। উনাকে নিয়ে লিখতে বসে বুঝতে পেরেছি কোথায় থেকে লেখা শুরু করব আবার কোন লেখার মাধ্যমে উনাকে অসম্মান প্রদর্শন হচ্ছে কিনা তা নিয়েও চিন্তার শেষ নেই। সর্বোপরি এমন সাদা মনের মানুষের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে যখন হসপিটালের বেডে মৃত্যুশয্যায় কাতরাচ্ছি, তখন প্রিয় বন্ধু সহচর, সহপাঠী আজিম উল্লা হানিফ সহ হসপিটালে আমাকে দেখতে যান। যখনই তিনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন কান্না ধরে রাখতে পারেনি, প্রবল ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করেছি এবং উনি আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, লক্ষ্য করে দেখলাম আমার সহধর্মিনী এবং প্রিয় বন্ধু, প্রিয় অভিভাবক কবি তাজুল ইসলাম সহ সকলের চোখে চোখে পানি দৃশ্যমান। অনার আবেগ-আপ্লুত কথাগুলো আমার বারবার কানে বাজতে থাকে। আমার সহধর্মিনী একটি পোস্ট করেন যেখানে উল্লেখ করা হয় আমার চিকিৎসা অবহেলা করা হচ্ছে। কবি তাজুল ইসলাম স্যার ডাক্তারদের কাছে বারবার ছুটে যাচ্ছেন আর বলছেন আমার ছেলেটি ব্যথায় কাতরাচ্ছে, অন্তত তাকে যন্ত্রণা থেকে একটু মুক্তি দিন। আমার স্ত্রীকে নিজের মেয়ের মত করে সান্ত্বনা দিচ্ছেন আর তখন থেকেই আমার স্ত্রী উনাকে নিজের পিতার আসনে বসিয়েছেন।
সেই থেকে তিনি আমার পরিবারের একজন। আমার সন্তানের আগমন বার্তায় তিনি তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। আমাদের বিবাহবন্ধনের দিনক্ষণে তিনি আমাদের দুজনকে নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন, যা আমাদেরকে এক অন্য শিখরে নিয়ে পৌঁছায়। পরিবারের অসুস্থতা তিনি মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এই কথাগুলো তো শুধু আমার সাথে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বয়সের সান্নিধ্যে এসে ও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, শুধু একটাই কারণ ছিন্নমূল মানুষ ও অসহায় এর মুখে হাসি ফুটুক।
আমাদের চারপাশে হাজারো সাদা মনের মানুষের বসবাস। আমরা সর্বদাই কালো মানুষের গল্প নিয়ে পড়ে থাকে কিন্তু এই সাদা মানুষগুলোকে এবং তাদের কর্ম গুলোকে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরলে তার থেকে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে আলোকিত হওয়ার সন্ধান পাবেন। মহান রাব্বুল আলামিন পৃথিবীর বুকে মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখানোর জন্য বহু মনীষী পাঠিয়েছেন। যারা তার নৈকট্য লাভের মাধ্যমে অর্জন করেছেন সুউচ্চ মর্যাদা ও সন্তুষ্টি।
আশপাশ এলাকার অসহায় মানুষের বন্ধু হিসেবে তাদের পাশে থাকেন । শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ,শীতার্তদের কম্বল বিতরণ,পথশিশু, জনসচেতনতা, গুজব প্রতিরোধ এমন বহু কর্মকান্ড তিনি সকলের সাথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আমার সহযোদ্ধা, আমার অভিভাবক, আমার সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি কাজে যার থেকে সুন্দর মূল্যায়ন পেয়ে থাকি। আমার কর্মপরিকল্পনা গুলো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে উনার সহযোগিতা অসীম। এই কর্মকান্ডে তার দৃশ্যমান কোন লাভ না থাকলেও তিনি বলেন তার আত্মতুষ্টির জন্যই তিনি এসব কাজ করেন এবং করে যাবেন।
এই মানুষটির গল্প বলতে গেলে হয়ত এই ছোট পরিসরে তা সম্ভব না।নির্ভীক ছুটে চলা একজন মানুষ। বিশ্রাম নেই তার এক মুহুর্ত ও।ছুটে চলছেন এলাকাবাসীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে।পরিবার, স্ত্রী-সন্তান থাকলে ও মানুষ টি কেন যেন পার্থিব বিষয়ে মোহিত নন।সকলেই ভালবাসেন,সকলের পাশেই দাড়াতে চান।
রাগ, ঘৃণা, অভিযোগ যেন তাকে স্পর্শ করে না। লোকের সমালোচনা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও তাকে পীড়া দেয় না। চরম সহিষ্ণু, হাস্যজ্জল এবং তীব্র মনোবোল বিশিষ্ট একজন মানুষ। কোন আলোকিত শিক্ষক এবং বিদ্যাপিঠ থেকে তিনি এই আলোকিত আত্মসত্তা লাভ করেছেন ইতিহাস হয়ত একদিন খুজবে এই প্রশ্নটি!
পরিশেষে বলতে চাই, একজন অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষ আমাদের তাজু স্যার।সমাজকে, রাষ্ট্রকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে এই মানুষটির। দোষ-ত্রুটি মিলিয়ে হয় একজন পরিপুর্ণ মানুষ।লোকের দোষ খোজা থেকে গুণ প্রকাশ অধিকতর শ্রেয়।
মহান স্রষ্টার নিকট এই আলোকিত মানুষটির জন্য প্রার্থনা জানাই তিনি যেন তার প্রতি সদয় হোন, তার মনের আশা পুরণ করেন এবং দীর্ঘায়ু দান করেন।- আমিন।
লেখক :
সাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী, সমাজকর্মী।
Leave a Reply