মোজাম্মেল হক আলম :
কুমিল্লার লাকসাম পৌর শহরের অধিকাংশ বহুতল ভবনে রয়েছে অগ্নিঝুঁকিসহ যে কোন ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এসব বহুতল ভবনে নেই অগ্নি নির্বাপণের যথাযথ সরঞ্জাম। অগ্নিঝুঁকির জন্য ভবন মালিকদের অসচেতনতা, উদাসীনতা এবং অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণকেই দায়ী করছেন বিশিষ্টজনরা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে লাকসাম পৌর শহরের অধিকাংশ বহুতল ভবনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে এসেছে। একদিকে পৌর এলাকায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বহুতল ভবন। অপরদিকে চলছে পুকুর-ডোবা ভরাট। আবার যত্রতত্র গড়ে উঠছে গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। ফায়ার সার্ভিসের দেয়া তথ্যমতে, পৌর এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ বহুতল ভবনে কোনো ধরণের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতি নেই। শুধু তাই নয়; আধুনিকায়নের আবরণে ঢাকা পৌর এলাকায় অবস্থিত লাকসাম ফায়ার সার্ভিসেও এখনো যুক্ত হয়নি অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক সরঞ্জাম।
পৌর প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৌর এলাকায় প্রায় ১৫ হাজারেরও অধিক কাঁচা-পাকা-আধা পাকা ভবন রয়েছে। তার মধ্যে পাকা ভবনের সংখ্যা ৩ হাজারের অধিক বহুতল (৭ তলা বা ততোধিক) ভবনের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বহুতল ভবনের অধিকাংশই অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত। নির্মাণকালে পৌর নীতিমালার তোয়াক্কা করেননি ভবন মালিকরা। ভবনে রাখেননি কোনো ধরণের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কিংবা প্রাথমিক সরঞ্জামাদি। শুধু বহুতল ভবনই নয়; পৌর এলাকার অধিকাংশ দ্বিতলা বা ততোধিক ভবনেও অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই।
লাকসাম দৌলতগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, লাকসাম পৌর এলাকার দ্বিতলা বা ততোধিক ভবনগুলোর অধিকাংশতেই জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার ডোর, উন্মুক্ত স্থান, ছাদে যাওয়ার পথ কিংবা পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। অথচ বহুতল ভবনকে অগ্নিদুর্ঘটনামুক্ত রাখার জন্য এ বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া অপরিকল্পিত ভাবে ভবন নির্মাণের ফলে অধিকাংশ এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী প্রবেশের রাস্তাও অবরুদ্ধ। অধিকাংশ ভবন মালিক ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তি পত্রকে অগ্রাহ্য করায় ঝুঁকির মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিক উচ্চতায় আগুন নেভানো এবং অন্যান্য দুর্ঘটনার শিকার মানুষকে জরুরী উদ্ধারে তাদের আধুনিক সরঞ্জাম নেই। পুরাতন প্রযুক্তির মুষ্টিমেয় যন্ত্রপাতি দিয়ে চলে অগ্নিনির্বাপণের কাজ। ফায়ার সার্ভিস অফিসের জনৈক কর্মকর্তা জানান, লাকসাম পৌর এলাকায় একের পর এক গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক ও আবাসিক বহুতল ভবন। অথচ অধিক উচ্চতায় অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কাজের জন্য ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতি নেই। ফলে পৌর শহরের বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যায়।
লাকসাম পৌর এলাকায় অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও ভবনে অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের বলেন, আমরা এটা স্বীকার করছি যে, লাকসাম পৌর শহরের বহুতল ভবনগুলোও ঝুঁকিমুক্ত নয়। পৌর নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ভবন নির্মাণই এর মূল কারণ। আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপির দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পৌর নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিৎকরণের লক্ষ্যে শীগ্রই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। পাশাপাশি আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে লাকসাম ফায়ার সার্ভিসে অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক সরঞ্জাম সংযুক্তির আবেদন করছি।
Leave a Reply