অনলাইন ডেস্ক :
পৌষের শুরুতেই কুমিল্লায় বাড়তে শুরু করেছে শীতের প্রকোপ। কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। বিশেষ করে কুমিল্লার গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। বিকেলের পর থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারপাশ। সকালেও থাকে কুয়াশার দাপট। অপরদিকে পৌষের হাড় কাপানো শীত আর কুয়াশার তীব্রতার দাপট মহাসড়কেও। রাতভর কুয়াশাচ্ছান্ন মহাসড়কে যান চলাচলে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়, ভোরে আলো ফোটার সাথে তা আরো বাড়তে থাকে। কুয়াশার তীব্রতায় সকালে দিনের আলোতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে চালাতে হয় গাড়ী। কখনো কখনো কুয়াশায় ঝাপসা সকাল ৯টায়ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে হেড লাইট জ্বালিয়ে বাস-ট্রাক-লরিগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে । এছাড়া রাতের কুয়াশায় ভেজা মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে থাকায় ঝুঁকি এড়াতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে চালাতে হয় গাড়ী। পিচ্ছিল মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হতে হচ্ছে অনেক সময়।স্বাভাবিক দৃষ্টিতে কাছের যানবাহনও দেখতে না পারায় মহাসড়কের পাশে পার্কিং করা যানবাহনের সাথে চলন্ত যানবাহনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। কেউ কেউ আবার সড়কের পাশে দাড়িয়েই অপেক্ষা করেন রোদ ওঠার।
ভোরে পদুয়ার বাজারে পার্কিং করে থাকা ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামগামী লরির চালক সালাম মিয়া জানান, সারারাত স্বাভাবিকের তুলনায় কম গতিতে লরি চালাতে হয়েছে। ভোরে চট্টগ্রাম পৌছানোর কথা থাকলেও কুমিল্লায় পার্কিং করে আছি।
ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করা এশিয়া এয়ারকন বাসের চালক মাজহার জানান, শীত আর কুয়াশার কারনে সকালে যাত্রীও থাকে না। এছাড়া কুয়াশার পানি জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকে। অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে ধীর গতিতে বাস চালাতে হয়।
একই রুটের বাস চালক সোহেল জানান, কুয়াশার কারনে মহাসড়কের পাশে পার্কিং করা যানবাহন দূর থেকে দেখতে পাওয়া যায় না। একারনে অনেক সময়ই রাস্তার পাশে দাড়ানো যানবাহনের পেছনে অন্য যানবাহন নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। নবজাতকসহ শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে দ্রুত। কিন্তু কুমিল্লার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় শিশুরোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল ও সদর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে এখন নবজাতকসহ শিশুরোগীর সংখ্যা শয্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। হাসপাতালের কর্তৃপরা বলছেন, ভর্তি রোগীর প্রায় ১৫ শতাংশই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে গত ৭ দিনের ব্যবধানে প্রায় চার শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে, যেখানে শিশু ও নবজাতক দুই ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা মাত্র ৭৪টি। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে গত সপ্তাহে ৫ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। আর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে স্বজনরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ছুটছেন।
শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় নি¤œ আয়ের এবং ভাসমান মানুষ। কনকনে শীতে দরিদ্র শ্রেণীর বাস্তুহারা মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায় প্রচন্ড কষ্টে। কেউ কেউ মাথার পাশে আগুন জ্বালিয়ে রাত কাটাচ্ছে কোন মতে।
সূত্র : কুমিল্লার কাগজ।
Leave a Reply