বেনজির আবরার :
বর্তমান সময়ের কর্পোরেট জগতে বেশ পরিচিত এক নাম লায়লা নাজনীন। তরুণদের পথপ্রদর্শক হিসাবে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন তিনি। বিশেষ করে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং এবং পরামর্শমূলক কর্মতৎপরতায় নিজেকে জড়িত রেখেছেন বহুদিন ধরে। বর্তমানে কর্মরত আছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে। গুণী এই মানুষটি তার বেড়ে উঠা, সফলতা ও কর্মযজ্ঞ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে-
প্রশ্ন- কর্পোরেট জগতে আপনি সফল একজন মানুষ। কঠিন এপথ পাড়ি দিলেন কীভাবে?
লায়লা নাজনীন- আমার ছোট থেকে বড় হওয়া পুরান ঢাকার লালবাগে। ব্যবসায়ী বাবা আর গৃহিনী মায়ের সংসারে মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোতেই বিয়ের চাপ সহ্য করতে হয়েছে। বাঁধা বিপত্তি তো থাককেই। তবে পাত্তা দেয়নি। এ কারণেই সব কিছুকে ডিঙ্গিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে কাজ করছি স্টার সিনেপ্লেক্সের মতো দেশ সেরা একটি প্রতিষ্ঠানে।
এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করার পর অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করি। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট থেকে হিউম্যান রিসোর্সের উপর এক বছরের পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা করি। পরবর্তী সময়ে হিউম্যান রিসোর্স এর উপর এমবিএ সম্পন্ন করি। পাশাপাশি আইবিএ এবং বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন থেকে তরুণদের কোর্স, ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ এর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন- শুনেছি শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি জীবনে প্রবেশ করেছেন। সেই গল্পটাও শুনতে চাই।
লায়লা নাজনীন- হ্যা ঠিক শুনেছেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর একাধিক স্কুলে চাকরি করেছি। পরে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে স্টুডেন্ট পড়িয়েছি। তবে পুরোদমে ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৪ সালে স্টার সিনেপ্লেক্সে যোগদানের মাধ্যমে। তখনও আমি ছাত্র ছিলাম। এ জন্য অবশ্য পুরো কৃতিত্বটা স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের পাওয়া উচিত। কর্মজীবনের প্রথমে কাজ করেছি একটি ব্রাঞ্চের হয়ে। এখন ধানমণ্ডি , মহাখালী এবং মিরপুর মিলিয়ে ৪ টি ব্রাঞ্চের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হিসাবে কর্মরত রয়েছি।
প্রশ্ন- তরুণদের জন্য আপনি নিয়মিত কাজ করছেন। সে বিষয় যদি বলতেন…
লায়লা নাজনীন- স্টার সিনেপ্লেক্সে চাকরির পাশাপাশি, কর্পোরেট ট্রেইনার এবং বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে অতিথি লেকচারার হিসেবে কাজ করি। ‘ক্যারিয়ার প্রো’ নামে স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্লাটফর্মের মেন্টর ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে তরুণদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবার চেষ্টা করি। এছাড়া বিভিন্ন ইভেন্ট ও প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করা ও প্রোগ্রামে উপস্থাপনা করি শখের বশে।
প্রশ্ন- সাম্প্রতিক সময়ে কর্পোরেট জগতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাদের উদ্দেশ্যে আপনার বিশেষ কোন পরামর্শ?
লায়লা নাজনীন- আমাদের দেশে পারিবারিক ভাবে মনে করা হয় মেয়েদের হলে পরিবারের দায়িত্ব শেষ। এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মেয়ে কর্মীদের নিয়োগের বেলায় নেতিবাচক ধারণা আছে। তাদের মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল মনে করে। যা মোটেও সঠিক নয়। এই ধ্যান ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। বর্তমানের মেয়েরা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন। তারা পরিবারের খেয়াল রাখার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে।
প্রশ্ন- আপনার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা যদি জানাতেন…
লায়লা নাজনীন- ইচ্ছে আছে সিনেপ্লেক্সের ১০০ টি ব্রাঞ্চ চালু করার। এবং সেখানে সক্রিয়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে মানুষের কাছে বিনোদন পৌঁছে দেবো। তাছাড়া ‘ক্যারিয়ার প্রো’এর মাধ্যমে দেশের যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা এবং দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য যোগ্য করে তোলাও আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ। সবাই যেখানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেখানে আমি দেশে থেকে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে যুব সমাজকে কাজে লাগাতেই চাইছি। কারণ আমরা সবাই দেশের বাইরে চল গেলে, আমাদের উন্নয়নের জন্য কারা কাজ করবে? সে কারণে ‘ক্যারিয়ার প্রো’ এর মাধ্যমে আমি এমন কিছু করতে চাই যা মানুষের কাজে আসবে ।
প্রশ্ন- তরুণদের জন্য কোন পরামর্শ?
লায়লা নাজনীন- আমি স্বপ্ন দেখি সবাই মিলে একটা স্কিলড জনশক্তি গড়বো। আমাদের তারুণ্যকে অনেক সাহসিকতার সঙ্গে আগামীর জন্য তৈরি হতে হবে।
প্রশ্ন- সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
লায়লা নাজনীন- আপনাদেরকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
Leave a Reply