1. [email protected] : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. [email protected] : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. [email protected] : nakshibarta24 :
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে কফির প্রথম জাত উদ্ভাবন

  • প্রকাশকালঃ বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
  • ২১১ জন পড়েছেন

কফির নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) আওতাধীন খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। আগামী দুই মাসের মধ্যে ‘বারি কফি-১’ নামের এই জাতটির অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। অনুমোদন মিললে এটিই হবে দেশের কফির প্রথম জাত। এরই মধ্যে গবেষকরা কফির সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে মূল্যায়নের মাধ্যমে রোবাস্তা কফির অগ্রবর্তী লাইন চিহ্নিত করেছেন। একই সঙ্গে জাতসম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর সমন্বয় করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

প্রকল্প পরিচালক আবু তাহের মাসুদ কালের বলেন, “খুব শিগগির এটি অনুমোদনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এটি হবে রোবাস্তা প্রজাতির একটি কফির উন্নত জাত। পাহাড়ে এর ফলন বেশ ভালো ও দ্রুত হয়। পোকার উপদ্রবও কম হয়। নিয়ম অনুসারে দেশের আবহাওয়া উপযোগী এই জাতের তথ্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিড উইংয়ে পাঠাতে হবে। তারা যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন দেবে, এটা আমরা নিশ্চিত। এরপর ‘বারি কফি-১’ রিলিজ দেওয়া হবে।”

জানা যায়, নব্বই দশকের শুরু থেকেই খাগড়াছড়ির গবেষণাকেন্দ্রে কফির ৪০টি চারা দিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ওই সময় খুব বেশি এগোয়নি গবেষণা। তবে গেল পাঁচ-সাত বছরে কফি চাষের বেশ অগ্রগতি হয়েছে।

বিশ্বে ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদযোগ্য প্রজাতি মাত্র দুটি। সেগুলো হলো কফি রোবাস্তা ও কফি অ্যারাবিকা। রোবাস্তা জাতের কফি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খুব উপযোগী। এটি সাধারণত সমুদ্র থেকে ৫০০-১০০০ মিটার উচ্চতায় এবং ১০০০-২০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ভালো ফলে। সে জন্য বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চল ও টাঙ্গাইলের মধুপুরগড়ের আবহাওয়ায় এটির সম্প্রসারণ সম্ভব।

প্রক্রিয়াজাতের মেশিন উদ্ভাবন : খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহ্মদ বলেন, এ দেশে কফি চাষ কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় না হওয়ার অন্যতম কারণ এর প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করার সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) কৃষি প্রকৌশল বিভাগ এবং পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে সব ধরনের যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে, যা খুবই কম দামে কিনতে পারবেন কৃষক। সব মিলিয়ে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকায় কেনা যাবে এসব যন্ত্র। বিদেশ থেকে এসব যন্ত্র আমদানি করতে খরচ হয় পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা। কর্মকর্তারা বলছেন, একটি যন্ত্র থাকলে এলাকার সবাই এখানে প্রক্রিয়াজাত করতে পারবে।

কফিতে আরো চাঙ্গা হবে পাহাড়ের অর্থনীতি : আম্রপালি আর সবুজ মাল্টা পাহাড়ি অর্থনীতিকে আগেই চাঙা করেছে। এই সজীব অর্থনীতিকে আরো গতি দিতে কফিতে সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। আবাদ উপযুক্ত পাহাড়ি মাটি এবং পচনশীল না হওয়ায় কফি চাষে বেশ আশাবাদী তাঁরা। এরই মধ্যে কফি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন পাহাড়ের ছোট-বড় অনেক বাগান মালিক। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে কফি চারা রোপণ করছেন।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহরের পাশেই একটি বাগান ঘুরে দেখা গেছে, রোবাস্তা জাতের কফির ৩৯৫টি গাছে থোকায় থোকায় ফল ধরেছে। যেগুলো পেকে লাল হয়ে উঠেছে সেগুলোই শ্রমিকরা তুলে ঝুড়িতে ভরছেন। বিরুবালা ত্রিপুরা নামের এক শ্রমিক জানান, গেল ডিসেম্বর থেকেই তাঁরা পাকা কফি তুলতে শুরু করেছেন। এখন প্রায় শেষের পথে। এগুলো তুলে তাঁরা পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ভেতর দিয়ে আসবেন। সেখানেই প্রক্রিয়াজাত করা হবে।

পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের অধীন এই বাগানে অ্যারাবিকা জাতের আরো ২০০টি চারা রোপণ করা হয়েছে বলে জানান বাগানের তত্ত্বাবধায়ক বলিন্দ্র ত্রিপুরা। তিনি বলেন, প্রতিটি গাছ থেকে এক মৌসুমে সাত থেকে আট কেজি কফিফল তোলা যায়। রোপণের পর তিন বছরের মধ্যেই ফুল আসতে শুরু করে। গত বছর তাঁরা এই বাগান থেকে ৪৫০ কেজি কফি তুলতে পেরেছিলেন। এ বছরও এমনই হবে বলে মনে করছেন তিনি। আপাতত এগুলো গবেষণাকেন্দ্রের ভেতর বসানো মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করে পরিচিতজনদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

এই বাগান ছাড়াও খাগড়াছড়িতে আরো আটটি কফি বাগান রয়েছে। এ ছাড়া রাঙামাটিতে রয়েছে আরো তিনটি। প্রতিটিতেই এক হাজার করে চারা রয়েছে। দুই বছর ধরে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে বলে জানান খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহ্মদ।

তিনি বলেন, কফি চাষে পাহাড় কিংবা অন্য ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না। কফি মরু অঞ্চলের উদ্ভিদ হওয়ায় সহজেই মিশ্র ফসল হিসেবে বনজ উদ্ভিদের সঙ্গে হালকা ছায়ায় সেচহীন অবস্থায় চাষ করা যায়। এতে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হয় না বললেই চলে। কফির বড় সুবিধা হলো পচনশীল নয়। পোস্ট-হার্ভেস্ট প্রক্রিয়ার পর চাইলে এক বছরও রেখে বিক্রি করা যায়।

তবে সুবিধার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও বলছেন কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ‘কফির বড় চ্যালেঞ্জ হলো তত্ত্বাবধায়ন ও পোস্ট-হার্ভেস্ট প্রসেসিং খুব সাবধানে করতে হয়। এ জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এ ছাড়া বাজারজাত করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠেনি। ফলে বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যক্তি উদ্যোগে। এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে আগামী চার-পাঁচ বছরে কফির আমদানি আমরা অনেক কমিয়ে দিতে পারব। দেশে উৎপাদিত কফি দিয়েই দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করা যাবে। এ জন্য বাজারজাতকরণে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা, যথাযথ জ্ঞান, দক্ষতা ও উন্নতজাতের চারা প্রয়োজন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হর্টিকালচার উইংয়ের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কফির উৎপাদন এলাকা ছিল প্রায় ১১৮.৩ হেক্টর, মোট উৎপাদন ছিল প্রায় ৫৫.৭৫ টন। ডিএইয়ের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি করা প্রক্রিয়াজাত কফির পরিমাণ ছিল ৩২.৫১৭ টন। যার বাজারদর পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

বর্তমানে পাহাড়ের তিন জেলায় কফি উৎপাদিত হলেও এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই হয় বান্দরবানে। আশাজাগানিয়া খবর হলো, পার্বত্যাঞ্চল ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী ও রংপুর এবং টাঙ্গাইলে কফি চাষ শুরু হয়েছে।

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম