মোজাম্মেল হক আলম :
চোখে-মুখে তার সারল্যের ছাপ। অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করেও সবসময় তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। সংসার সমরাঙ্গনের একজন সফল যোদ্ধা লনি গোপাল সাহা (মালেকা বানু)। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সংগ্রামী পিতা। পেশায় একজন চানাচুর বিক্রেতা। কুমিল্লার লাকসাম পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ড পূর্ব লাকসাম এলাকার বাসিন্দা তিনি। সবার কাছে তিনি ‘মালেকা বানু’ হিসেবে পরিচিত। তার পিতার নাম উপেন্দ্র কুমার সাহা।
রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চানাচুরের বাকশো হাতে প্রতিদিন সকালে বের হন মালেকা বানু। মধ্য রাত অবধি ঘুরে বেড়ান লাকসামের আনাচে-কানাচে। গত ৪০ বছর ধরে তিনি এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে প্রতিদিন তিনি চানাচুর বিক্রি করে ৩ শ’ থেকে ৪ শ’ টাকা উপার্জন করেন। গ্রামে গ্রামে গেলে চানাচুর বিক্রেতা মালেকা বানু’র বাকশো ঘিরে দাঁড়ায় সেখানকার শিশু-কিশোররা। চানাচুর বিক্রির পাশাপাশি সুমিষ্ট ভাষা ও অঙ্গ-ভঙ্গিতে তিনি শিশু-কিশোরদের বিনোদনও দেন।
সপরিবারে পূর্ব লাকসাম এলাকার পৈত্রিক বাড়িতে বসবাস করেন ষাটোর্ধ্ব ‘মালেকা বানু’। বর্তমানে বয়সের ভারে তিনি নুয়ে পড়েছেন; তবু বার্ধক্যের কাছে হার না মেনে চানাচুরের বাকশো হাতে জীবিকার খোঁজে চষে বেড়ান এদিক-ওদিক। অলস ও উদাসীন মানুষদের জন্য তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
মালেকা বানু’র প্রতিবেশি পূর্ব লাকসাম এলাকার তরুণ ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসাইন অন্তর বলেন, ‘কর্মক্ষম হওয়া স্বত্তেও যারা জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারে উদাসীন, আমাদের মালেকা বানু তাদের জন্য অনন্য উপমা। গত চার দশক ধরে তিনি চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুর পরিবর্তন হলেও আমাদের মালেকা বানুর পরিবর্তন হয়নি। তিনি সেই আগের মতই সাদামাটা জীবন-যাপন করছেন। বার্ধক্যে এসেও অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে তিনি স্বনির্ভর। যা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় বিষয়।’
Leave a Reply