মোজাম্মেল হক আলম :
তাদেরও বাবা-মা, ভাই-বোন আর আত্মীয়-পরিজন রয়েছে। সমাজের আর দশজন মানুষের মতো তাদেরও আছে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ। কিন্তু তারপরও ঈদ এলে কোথায় যেন একটা শূন্যতা ভর করে। সাধারণের বাঁকা চাহনিতে ফিরতে পারে না পরিবারের কাছে। বাধ্য হয়েই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে হয় ঈদের আনন্দ।
লাকসাম মুদাফ্ফরগঞ্জ, বৌ বাজার, ধামৈচা সহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দারা জানালেন তাদের মানবেতর জীবন-যাপনের কথা। সমাজ ও পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বসবাস করলেও তারা মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। শিক্ষার আলো পৌঁছে না তাদের ঘরে। কর্মসংস্থান না থাকায় মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী হয়ে দিনাতিপাত করতে হয় তাদের। পরিবার বিহীন দুঃখ-বেদনার দোলাচলে ঈদ আসে তাদের ঘরে। প্রতি ঈদে তারা নিজেরাই নিজেদের উপহার কিনে দেন। কেউ কেউ এ সময়টাতে পরিবারের কাছে ফিরতে পারলেও অনেকের সেই আনন্দ ম্লান হয়ে যায় প্রতিবেশীদের কটু মন্তব্যে। আর তাই যন্ত্রণা এড়াতে তারা ঈদে থেকে যান আশ্রয়দাতার (গুরু মায়ের) কাছে। একজন ‘গুরু মা’ এর অধীনে বেশ কয়েকজন শিষ্য মিলে বসবাস করেন তারা।
লাকসামের বিভিন্ন এলাকায় দলে-উপদলে বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের ‘গুরু মা’ চুমকী। অর্ধশতাধিক শিষ্যকে নিয়ে তার নিজস্ব ভূবন। সমাজের প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ঈদে আত্মীয়-পরিজনের সাথে আনন্দ ভাগাভাগির সৌভাগ্য হয় না তাদের। ঈদের দিন লাকসামের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো মিলিত হয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
সম্প্রতি হিজড়া সম্প্রদায়ের পায়েল ও পূজার সাথে কথা হলে তারা বলেন, ‘করোনা সংকটের কারণে ইদানিং আমরা আগের মত সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছি না। ফলে আমাদের সম্প্রদায়ের অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে আমরা বরাবরই অবহেলিত। সমাজের বিত্তবানদের কাছেও আমরা অবজ্ঞার পাত্র হিসেবেই বিবেচিত হই।’ করোনা মহামারীতে লাকসামের হিজড়া সম্প্রদায়ের দুরাবস্থার কথা অবগত হয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম।
মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হিজড়া সম্প্রদায়ের গুরু মা চুমকী বলেন, ‘মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রী মহোদয় সবসময় আমাদের দিকে স্নেহের দৃষ্টিপাত করেন। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। সেই সাথে আমাদেরকে স্থায়ী ভাবে পুনর্বাসন, শিক্ষার আওতায় আনা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য আমরা মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
Leave a Reply