মোজাম্মেল হক আলম :
প্রতিনিয়ত যেভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে, এখন কোথাও নিরাপদ বোধ করছে না ব্যবসায়ি এবং সাধারণ জনগণ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া লাকসাম বাজারে অগ্নিকাণ্ড এই উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থার দুর্বলতার চিত্র ফুটে উঠেছে। অথচ আমাদের এই বাহিনীর কর্মকর্তা ও কর্মীরা যেকোনো দুর্যোগে নিজেদের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আন্তরিকভাবে কাজ করে প্রাণপণ লড়ে যায় বিপদগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতায়।
সমালোচনা হচ্ছে অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়েও। এ মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। অগ্নিনির্বাপণে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পানির পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা। কিন্তু এলাকায় বেশির ভাগ বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পানি সরবরাহের সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা গেছে। তাই অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন হতে পারে একটি কার্যকর উদ্যোগ।
অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় দ্রুত পানি সরবরাহের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পাম্পযুক্ত পানিকল) স্থাপন করা খুবই জরুরি। কারণ, ফায়ার হাইড্রেন্ট হচ্ছে পানির একটি সংযোগ উৎস। যা পানির প্রধান উৎসের সাথে যুক্ত থাকে। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এই উৎস থেকে পানি ব্যবহার করা যায়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে লম্বা পাইপের সাহায্যে ইচ্ছেমতো যেকোনো দূরত্বে পানি সরবরাহ করা যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বহু আগে থেকেই ব্যবহৃত একটি পদ্ধতির নাম ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’।
তাছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ গিঞ্জি এলাকার যেসব রাস্তায় অগ্নিনির্বাপক গাড়ি সহজেই প্রবেশ করতে পারে না সেখানে এই ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ বেশ কার্যকর। এটি রাস্তার ধারে স্থাপিত এক ধরনের পানির কল বা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প যেখান থেকে প্রয়োজনের সময় পানি ব্যবহার করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বহু আগে থেকেই ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এই ব্যবস্থাটির ব্যবহার দেখা যায় না। যদিওবা দেশের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে এ ব্যবস্থা কিছুটা চোখে পড়েছে।
ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা চালু করার কারণ, ২০১৭ সালে লাকসাম বাজারের স্বর্ণ, কাপড় ও মনোহরী পট্টিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড এবং সম্প্রতি ৮মে নোয়াখালী রেলগেইট সংলগ্নে বনফুলসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পর্যাপ্ত পানির উৎসের জন্য ওইসব অগ্নিকান্ডে ব্যবসায়িদের শত কোটি টাকার মতো ক্ষতি সাধিত হয়েছে। দৃশ্যত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সরু অলিগলি পেরিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারলেও প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের অভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন না। ফলে আগুনের ব্যাপ্তি আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়। তাই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ফায়ার হাইড্রেন্ট হতে পারে একটি চমৎকার উদ্যোগ।
অন্যদিকে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, প্রচন্ড তাপদাহে পানির স্তর নিচে নেমে পুকুর, ডোবা, জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এ ব্যাঘাত ঘটে বেশি। ফলে যেকোনো অগ্নিকাণ্ডে আমাদের পানির উৎস খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হয়। অথচ ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করে আমরা সে সমস্যা সমাধান করতে পারি। উন্নত বিশ্বের আদলে অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় দ্রুত পানি সরবরাহ করতে পৌর কৃর্তপক্ষ এবং ফায়ার সার্ভিসের উদ্যোগে লাকসাম পৌর শহরে রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা অতি প্রয়োজন। কারণ উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশও এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যকর ব্যবস্থাপনাই পারে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে দিতে। এ বিষয়ে এণদাঞ্চলের উন্নয়নের মহারথী, গ্রামকে শহরে রূপান্তরের অন্যতম দাবীদার, বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম মহোদয়ের দৃষ্টি কামনা কামনা করা হয়েছে।
Leave a Reply