মোজাম্মেল হক আলম :
একসময় শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেজুর রসের স্বাদ উপভোগ করতেন কুমিল্লার লাকসামবাসী। তবে এখন আর সেদিন নেই। অনেকটাই পাল্টে গেছে সেই চিত্র। এখন কুমিল্লা জেলার অনেক এলাকাতেই নেই খেজুর গাছের অস্তিত্ব। কোথাও অল্পস্বল্প গাছ রয়েছে তবে তাতে আর আগের মতো রস মেলে না। তাই আগের মতো নিয়ম মেনে শীত এলেও রসের স্বাদ পান না এ অঞ্চলের জনসাধারণ।
বর্তমানে লাকসাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কিছু কিছু যায়গায় খেজুর গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় এসব গাছ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করার কাজও বৃদ্ধি করেছেন।
উপলোর ফুলগাঁও এলাকার স্থানীয়রা জানান, রাস্তার পাশের খেজুর গাছ বিলীনের অন্যতম কারণ বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ। অন্যদিকে রাস্তার পাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর বাসা-বাড়ি গড়ে উঠছে। এসব কারণেও কাটা পড়ছে খেজুর গাছ। আবার এক শ্রেণির লোক খেজুর গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওই এলাকার পরিবেশ প্রেমিদের দাবি, খেজুর গাছ রক্ষায় সবারই এগিয়ে আসা জরুরি।
কুমিল্লা কোটবাড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন খন্দকার বলেন, এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যের সুস্বাদু খেজুর রস। এক সময়ে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামগঞ্জের মানুষ গাছ ছিলানো (গাছ কাটা) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কে কার আগে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করবেন তা নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। এখন তা আর নেই বললেই চলে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জ্বালানি কাজে নির্বিচারে ব্যবহার করা, নতুন নতুন বাড়ি, দোকানঘর তৈরি করায় খেজুর গাছের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে খেজুর রস ও গুড় আজ দুষ্পাপ্য হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত গাছি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন। ৮ থেকে ১০ বছর আগেও এ অবস্থাটি দেখতে পাওয়া যেতো, এখন সে দৃশ্যটি তেমন আর চোখে পড়ে না। খেজুর গাছের সংকট দেখা দেওয়ায় আগের মতো আর রস পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব অঞ্চলে কিছু গাছ রয়েছে সবাই মিলে যদি তার সঠিক পরিচর্যা করা যায় তবে আবারো ফিওে আসতে পারে গ্রামীণ অঞ্চলের হারানো ঐতিহ্য।
উপজেলার শোকতলা গ্রামের আবদুর রহমান বলেন, ‘এক সময় আমাদের বাড়িতে অনেক খেজুর গাছ ছিল। আধুনিকতার সঙ্গে খেজুর গাছ বিলীন হওয়ার পথে। বর্তমানে কয়েকটি গাছ আছে। শীত আসলে গাছিদের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে এ গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। আর খেজুর রস ছাড়া শীতের আমেজ নেই।’
উপজেলার লোলাই গ্রামের বাসিন্দা গাছি আবদুল জলিল বলেন, ‘পূর্ব পুরুষরা গাছ চিলে রস সংগ্রহ করতেন। তাদের ন্যায় আমিও প্রায় ৭/৮ বছর ধরে এ কাজে যুক্ত আছি। তবে গ্রামে এখন খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। নেশার বসে সন্ধান চালিয়ে বের করে গাছে চিলে খেজুর রস সংগ্রহ করার চেষ্টা করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘গাছের মালিককে সপ্তাহে তিন দিন রস দিয়ে বাকি চার দিন আমি রস নেই। সেই রস বিক্রি করে যে টাকা পাই তাতে পরিশ্রমের মূল্য হয় না। মৌসুমি রসের স্বাদ পেতে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা ছাড়তে পারছি না। শীত বেশী থাকলে গাছ থেকে বেশি পরিমাণে রস সংগ্রহ করা সম্ভব।’
Leave a Reply