লাকসাম প্রতিনিধি :
কুমিল্লার লাকসামে দুই দিনে দুই তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৫ এপ্রিল) পৌরসভার রাজঘাট উত্তরপাড়া ও মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) পূর্ব হাউজিং এস্টেট এলাকা থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে রাজঘাট উত্তরপাড়া মোবারক সর্দারের ভবনের তৃতীয়তলা থেকে এক সন্তানের জননী ঐ তরুণীর (১৯) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। চৌদ্দগ্রামের এ তরুণী প্রেম করে দেবিদ্বারের এক যুবককে বিয়ে করে। উভয়ের পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় বিয়ের পর লাকসামে বসবাস করছিল। অনেকটা অভাব-অনটনে কাটতো তাদের সংসার জীবন। তার স্বামী লাকসামে একটি হোটেলে কাজ করে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাতে (৪ এপ্রিল) লাকসাম পূর্ব হাউজিং এস্টেট এলাকা প্রবাসী জাকির মিয়ার ভবনের চতুর্থ তলা থেকে ভাড়াটিয়া জেসমিন আক্তারের বড় মেয়ে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার বৈশাখীর (১৬) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আত্মহত্যার পূর্বে একটি চিরকুট লিখে যায় এ তরুণী। নাঙ্গলকোটের বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের গান্দাচি গ্রামের মৃত ফরিদ মিয়ার মেয়ে ফারজানা আক্তার বৈশাখী। মায়ের সাথে লাকসামে বসবাস করছিল। ২০২০ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর কোনোমতে তাদের সংসার চলছিল। তার মা লাকসামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আয়ার কাজ করেন।
এদিকে, মৃত্যুর আগে বৈশাখী একটি চিঠি লিখে যায়। চিঠিতে একই ইউনিয়নের বেরী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে শাহাদাত হোসেন রাফি ও তার বন্ধুদের মানসিক অত্যাচারে সে মৃত্যুর পথ বেছে নেয় বলে উল্লেখ করে।
চিঠিতে বৈশাখী উল্লেখ করে, “মা আমি মরে যাচ্ছি পারলে আমাকে মাফ করে দিও। বিশাস কর মা আমি মরতে চাই নি। কিন্তু রাফির রোজকার ব্যবহার আমাকে মরতে বাধ্য করেছে। আমার সাথে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় অন্য একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। সব জানার পরও আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু ওর প্রতি আমার ভালোবাসা আর আমার প্রতি ওর, আর ওর বন্ধুদের দূরব্যবহার আমাকে বাস্তে (বাঁচতে) দেয় নি মা। আমার মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী রাফি।”
এ ঘটনায় পুলিশ রাফীকে প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লা আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়।
এ বিষয়ে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ আহমেদ জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
Leave a Reply