নিজস্ব প্রতিনিধি :
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুল হাসানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে উপজেলা যুবলীগ। চলতি বছরের ২০ মে যুবলীগ নেতা কামরুলের বিরুদ্ধে ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে সাংগঠনিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ২৩ মে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে দলীয় নেতৃবৃন্দের তদন্তের মাধ্যমে কামরুলের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কামরুলকে পূর্বোক্ত পদে পুনর্বহাল করে উপজেলা যুবলীগ। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে যুবলীগ নেতা কামরুলের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যুবলীগ নেতা মোঃ কামরুল হাসান দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ ওয়াহেদ আলীর ছেলে। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে ফার্স্ট ক্লাস অর্জন করে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা আইন কলেজে অধ্যয়নের পাশাপাশি ইন্দারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সুলতানপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিভিন্ন সময় নিজ উদ্যোগে স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে বিভিন্ন ধরণের সহায়তা করে থাকেন। সম্প্রতি করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর তিনি ব্যক্তিগত অর্থায়নের পাশাপাশি নিকটস্থ শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে কিছু ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে নিজ ওয়ার্ডের হতদরিদ্র বাসিন্দাদের মাঝে সুষম ভাবে বন্টন করেন। গত ২০ মে তার বিরুদ্ধে সংগৃহিত ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ এনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন করেন সুলতানপুর ইউনিয়নের সানানগর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সাংগঠনিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে যুবলীগ নেতা কামরুলকে তাৎক্ষণিক দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করে উপজেলা যুবলীগ। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ সদস্য ও সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাজাহান সরকার, ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুর রব মাঝি এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক হুমায়ুন কবিরের তদন্তের মাধ্যমে যুবলীগ নেতা কামরুলের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কামরুলকে পূর্বোক্ত পদে পুনর্বহাল করে উপজেলা যুবলীগ। এর আগে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের অনুভূতি ব্যক্ত করে সুলতানপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি সম্ভ্রান্ত আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। আমার বাবা ওয়াহেদ আলী মেম্বার দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেবিদ্বারের গণ-মানুষের নেতা রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপি মহোদয়ের পিতা, সাবেক সফল মন্ত্রী ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী মহোদয়ের সান্নিধ্যে থেকে আওয়ামী রাজনীতি করেছেন। তিনি ১৯৯২ সালে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ৫নং ওয়ার্ড (সানানগর- বেতুয়া-ইন্দ্রারচর) আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বেও রয়েছেন। আমার ভাই ক্বারী মাওঃ মাহুবুবুর রহমান ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, আরেক ভাই সুজন মিয়া ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের রাজনীতির পাশাপাশি উষা জুট মিলের ৫ হাজার শ্রমিকের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বিগত ২০ বছর যাবৎ সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আমার বড় ভাই মরহুম বাবুল মেম্বার দীর্ঘ ১৪ বৎসর যাবৎ সুনামের সাথে ইউপি মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমার সহধর্মিণী শারমিন আক্তার (এম বি এ) যুবলীগে মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করছন। অর্থাৎ পারিবারিক ভাবেই আমরা জনবান্ধব। মানুষের কল্যাণার্থে রাজনীতি করি। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নের পাশাপাশি নিকটস্থ শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে কিছু ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আমার নিজ ওয়ার্ডের হতদরিদ্র বাসিন্দাদের মাঝে সুষম ভাবে বন্টন করি। আমার কার্যক্রমে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি কুচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ তুলে গ্রামের হাতেগনা কিছু সহজ-সরল লোককে দিয়ে মানববন্ধন ও থানায় অভিযোগ করায়। পরবর্তীতে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় উপজেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দ আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আমাকে পূর্বোক্ত পদে পুনর্বহাল করেন। আমার বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আমাকে পূর্বোক্ত পদে পুনর্বহাল করায় আমি দেবিদ্বারের গণ-মানুষের নেতা রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপি মহোদয়, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক হাজী মোঃ আবুল কাশেম (ওমানী), যুগ্ম আহবায়ক বাবুল হোসেন রাজু, জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাজাহান সরকার, সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মোঃ হুমায়ুন কবির, সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুর রব মাঝি, আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগ কুমিল্লা (উত্তর) জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক মামুনুর রশিদ সরকার, সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ও মেম্বার আবুল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গত ২৩ মে ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগে আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তক্রমে সুলতানপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুল হাসানকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে আমাদের নেতৃবৃন্দের তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ায় আজ (৩০ অক্টোবর শুক্রবার) আমরা তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে পূর্বোক্ত পদে পুনর্বহাল করেছি। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।’
Leave a Reply