1. mti.robin8@gmail.com : Touhidul islam Robin : Touhidul islam Robin
  2. newsnakshibarta24@gmail.com : Mozammel Alam : Mozammel Alam
  3. nakshibartanews24@gmail.com : nakshibarta24 :
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাহে রমজানের মহিমায় উজ্জীবিত হই; চর্চা করি দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় অনুভূতি

  • প্রকাশকালঃ বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৭২ জন পড়েছেন

মুহাঃ জাকির হোসাইন :

এম.এম.এম.এ (এম.ফিল গবেষক


মাহে রমজানের মহিমা :
আমরা অবস্থান করছি সর্বশ্রেষ্ঠ মাস রমজানে। তাই প্রারম্ভে জানাচ্ছি মাহে রমজানের সওগাত ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা। মাহে রমজানের সাওম ইসলামের অন্যতম বিধান। রমজান মাসের প্রতিটি নেক আমলের সাওয়াব যেমনি অপরাপর মাসের তুলনায় অধিক, তেমনি এর মহিমায় উজ্জীত হয়ে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুভূতির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় বান্ধাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য রয়েছে অপূর্ব সুযোগ।
রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন মাজীদে মুমিনদের বহু বার তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন: কুরআন মাজীদের সূরা আলে ইমরানের ১০২নং আয়াতে আল্লাহ বলেন: “হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর। আর তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করোনা।” বাস্তবতার নিরীখে রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়ার বহি:প্রকাশ ঘটে। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববতী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া (পরহেযগারী) অর্জন করতে পার।” (সূরা বাক্বারাহ-১৮৩)
রমজান কুরআন নাযিলের মাস। সর্বকালের সর্বশ্রেণির মানুষের ঐশী দিক নির্দেশনা মহাগ্রন্থ আল কুরআন যা পবিত্র রমজান মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ বলেন: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্ব যুগের জন্য প্রযোজ্য আসমানী কিতাব আল কুরআনের সূরা আল বাক্বারার ১৮৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “রমজান মাসই হল সে মাস যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশনা আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার ফলে আল্লাহ তা‘আলার মহত্ত¡ বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” (সূরা বাক্বারা-১৮৫)
হাদীস শরীফে এসেছে- রমজান এমন একটি মাস যাতে নবী (আ:) গনের প্রতি আসমানী কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করা হয়েছে।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন: হযরত ওয়াসেলা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন: ইব্রাহিম (আ:) এর প্রতি সহীফা রমজানের প্রথম রাত্রিতে মুসা (আ:) এর প্রতি তাওরাত রমজানের ষষ্ঠ তারিখে, ঈসা (আ:) এর উপর ইঞ্জিল রমজানের ত্রয়োদশ তারিখে আর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে রমজানের চব্বিশ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর। (তাফসীরে ইবনে কাছির)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত: যখন জিব্রাঈল (আ:) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিব্রাঈল (আ:) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কুরআন তেলাওয়াত শোনাতেন।
তাই এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা, কুরআন বুঝা এবং তদানুযায়ী আমল করা; কুরআনের আলোকে ব্যক্তি,পরিবার ও সমাজ গঠণ করা মুমিনের নৈতিক দায়িত্ব।
মাহে রমজানে ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করতে পারে। মুমিন ব্যক্তির প্রতিটি ভাল কাজের সাওয়াব দশ থেকে সাতশ গুণ দেয়া হয়। কিন্তু রমজান মাসে তার চেয়েও বেশী দেয়া হয়। হাদীসে এসেছে-
হযরত সালমান ফারসী (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শা’বান মাসের শেষ দিন আমাদের উদ্দেশ্য নছিহত করতে গিয়ে বলেন, “হে মাবন মন্ডলী ! একটি মহিমান্বিত মাস তোমাদের কে আচ্ছাদন করে রেখেছে। এ মাস একটি বারাকাতময় মাস। এটি এমন এক মাস, যার মধ্যে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করল সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরয সম্পাদন করল। এ মাস সবরের (ধর্যের) মাস; সবরের সাওয়াব জান্নাত। এটা সহমর্মিতার মাস। এ মাসে মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তা তার গুনাহ মাফের কারণ হবে, হবে জাহান্নামের অগ্নিমুক্তির উপায়। হাদীসের অপর অংশে রাসূল (সা.) বলেন, এটা এমন এক মাস যার প্রথম অংশে রহমত, মধ্যম অংশে মাগাফরাত, শেষাংশে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত। (মিশকাতুল মাছাবিহ-১৯৬৫)
রমজানে ফরজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় করে অধিক সাওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে। রমজানে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া বিধান; সিয়াম পালন করে আর রাতের বেলায় জাগ্রত থেকে দাঁড়িয়ে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বিশেষ ক্ষমা অর্জন করতে সক্ষম হয়। যেমন: হাদীসে নববীতে এসেছে, নযর ইবনে শায়বান (রহ.) থেকে বর্ণিত: তিনি আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে তিনি তার পিতা থেকে ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের জন্য রাতের ক্বিয়াম (তারাবির সালাত ) কে সুন্নাত করে দিয়েছি। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আালার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে রমজানের সাওম (রোজা) পালন করে এবং তারাবিহর সালাত (নামাজ) আদায় করে, সে স্বীয় গুনাহ সমূহ থেকে সে দিনের মত পবিত্র হয়ে যায় যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছিল। (নাসাঈ-২২১০)
এ মাসে রাহে লিল্লাহে দান করার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। সমগ্র বছরে দান করার জন্য কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা রয়েছে। তবে রমজান মাসে দান করা যে, অধিক উপর্যুক্ত সময় তা নবী কারীম (সা.) স্বীয় কর্মের মাধ্যমে উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। হাদীসে বিবৃত রয়েছে-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন। যখন জিব্রাঈল (আ:) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিব্রাঈল (আ:) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কুরআন তেলাওয়াত শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সা.) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন। (বুখারী-০৬)
ই‘তিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আর এর সম্পৃক্ততা রয়েছে রমজানের সাথে। দুনিয়া বিমুখ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে ই‘তিকাফ গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলিম সমাজের প্রত্যেক প্রাপ্ত, সুস্থ ব্যক্তি এ ইবাদত করা প্রয়োজন। সমাজের কেউ যদি তাদের মসজিদে ই’তিকাফ না করে তাহলে সকলেই এর দায়ভার নিতে হবে। কেননা, ইহা রাসুল (সা.) এর অন্যতম সুন্নাত। তবে সমাজের কতিপয় প্রতিনিধি এ ইবাদতটি করলে অন্যরা দায়ভার মুক্তির আশা করা যায়। রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা লাইলাতুল ক্বদরের ফযিলত লাভের কারণে এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। হাদিসে এসেছে,“ রাসুল (সা.) রমজান মাসের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করতেন। তিনি তাঁর উফাত পর্যন্ত এভাবে ইতিকাফ করতেন। অতঃপর তাঁর স্ত্রীগন তাঁর ইন্তেকালের পরে ই‘তিকাফ করতেন”। (মুসলিম:২৬৭৪)
লাইলাতুল ক্বদর রমজানেই। মুমিনের জন্য অধিক সাওয়াব লাভের অপূর্ব সুযোগ মহিমান্বিত রজনী তথা লাইলাতুল ক্বদর রমজানের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। কুরআনুল কারীম নাযিল হওয়ার কারণেই এই রাতের মর্যাদা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন) এক বরকতময় রজনিতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরী কৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। (সূরা- দোখান-৩-৫)
হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত: আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধান কর। (বুখারী-২০১৭)
রোজাদার তথা মুমীন ব্যক্তির অন্যতম কর্তব্য হচ্ছে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে তার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়া। রমজান আত্ম উপলদ্বি, আত্ম বিবেচনা ও আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসে একনিষ্ঠভাবে ইসলামের বিধান পালন তথা ইবাদতে অভ্যস্থ হয়ে পরবর্তি এগারটি মাসে সে প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে ইবাদতের ধারা অব্যাহত রেখে আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় বান্দা হওয়া যায়। প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমের এ সুযোগ কাজে লাগানো উচিৎ। অবশেষে মনীষির মহামূল্যবান উক্তির মাধ্যমে এ পর্বের যবনিকা টানছি। তাহলো- We hate disuse, misuse, we congratulate properuse Allah`s gifts for us. অর্থাৎ আমরা অব্যবহার এবং অপব্যবহারকে ঘৃণাকরি, আমরা আল্লাহর উপহারের যথাযত ব্যবহারকে অভিনন্দন করি।

লেখক : 
উপাধ্যক্ষ, বাঙ্গড্ডা ফাজিল মাদ্ররাসা।
০১৮১৭-৬১০৪৮৪

 

খবরটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

বিজ্ঞাপন

Laksam Online Shop

first online shop in Laksam

© All rights reserved ©nakshibarta24.com
কারিগরি সহায়তায় বিডি আইটি হোম