নিজস্ব প্রতিনিধি :
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।রোববার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনের সাথে ধাক্কা লেগে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়। ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যদের কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস যাওয়ার পথ করে দেয়ার জন্য হাসানপুর স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় মালবাহী ট্রেন। কিন্তু প্রচন্ড গরমে সিগন্যাল পয়েন্টের তার ছুটে গিয়ে পয়েন্ট না মিলায় লুপলাইনে ঢুকে একই অভিমূখী মালবাহী ট্রেনকে সজোরে ধাক্কা দেয় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। এতে ঐ ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি ও মালবাহী ট্রেনের ২টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ছিন্নভিন্ন লাইনে একটির ওপর আরেকটি বগি উঠে যায়। কোন কোনটি লাইনের পাশে ছিটকে পড়ে। এতে অন্তত ৪০ জন যাত্রী আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনার পর লাকসামসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার কাজ শুরু করে। পরে লাকসাম ও ফেনী থেকে রিলিফ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত বগি উদ্ধারে নামে। প্রায় ৩ ঘন্টা পর একটি লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
সরেজমিনে গিয়ে যাত্রী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাসানপুর রেলস্টেশনের ঢুকার সময় সময় সিগন্যাল পয়েন্টের না মেলানোর কারণে আফলাইনের দুই নাম্বার লাইনে দাড়ানো পার্সল ট্রেনের পিছন দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সোনার বাংলা ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি ও মালবাহী ট্রেনের ২টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় ফ্যার্মেসিগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ঘটনার পর পরই স্টেশন মাস্টার পালিয়ে যায়।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে নাঙ্গলকোট স্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন জানান, দুর্ঘটনায় অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে।
ট্রেন যাত্রী জামাল হোসেন বলেন, তার বাড়ি জামালপুর জেলায়। বাড়িতে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে এ ট্রেনে উঠেন। হঠাৎ ট্রেনটি কাঁপতে থাকে। পরে বিকট শব্দ করে থেমে যায়। দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে অন্য যাত্রীদের উদ্ধার করি। এতে কেউ মারা যেতে দেখিনি। তবে আহত হয়েছে অনেকে।
দায়িত্বে থাকা জিআরপি পুলিশ সদস্য আবসার বলেন, ট্রেনের ভিতরে নামাজরত অবস্থায় পড়ে নাক দিয়ে রক্ত বাহির হয়। কোনভাবে ট্রেন থেকে ফ্যার্মেসিতে চিকিৎসা নিই।
হাসানপুর বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী বাচা মিয়া বলেন, আমরা ইফতার করতেছি। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। দ্রুত বাহিরে গিয়ে দেখি ট্রেন এক্সিডেন্ট করেছে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে আশেপাশের হাজার হাজার লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে। এতে কেউ মারা যায়নি।
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট থানার ওসি মো. ফারুক হোসেন জানান, ঘটনাটি শুনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ফোর্সসহ তিনি নিজে ঘটনাস্থলে চলে আসেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে অনেক। কেউ মারা যাওয়ার সংবাদ পাইনি।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি একটি ট্রেন অপরটিকে ধাক্কা দিয়েছে। ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ট্রাফিক কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৪ সদস্যদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
Leave a Reply