আবদুল কুদ্দুছ পবন :
(ক)
স্বামী তার বাধ্যগত পর্দানশীল পরহেজগার স্ত্রীকে রুমালে বাঁধা একটা পোটলা দিলো।প্রণয়িণী স্ত্রীর চিবুক স্পর্শিলো প্রিয়। মায়াবিণী মেহবুবা তাকালো কর্তাপানে। দেখলো পতির আঁখি অশ্রুসজল। আদরের হাত স্ত্রীর কপোলে বুলোতে বুলোতে স্বামীর উচ্চারণ ” এই রতন তোমাকে দিলাম ; তোমার জিম্মায় রাখলাম। এই ই আমার সারাজীবনের সংগ্রহশালা। আমি একমাসের জন্যে একটি সফরে যাচ্ছি। তারপর ফিরে আসবো। মনে রেখো, আমার আর কিছুই নেই। যা কিছু সংগ্রহে আছে তা এই রুমালেই বাঁধা।যতন করে রেখো……!” এই বলেই প্রেয়সীর কপালে চুম্বিলো স্বামী। তারপরই বের হলো নিজের অপ্রকাশিত উদ্দেশ্যে।
(খ)
এরই মধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেলো একমাস। স্বামী ফিরে এলোনা এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। স্ত্রী ভীষণ চিন্তিত। প্রতিদিন নামাজ অন্তে আল্লাহর দরবারে স্বামীর ফিরে আসার তৌফিক চেয়ে দীর্ঘ মুনাজাত। তবু স্বামীর ফেরার নেই লক্ষণ।এই করে করে দিন যায়। মাস যায়। জীবন থেকে বছর চলে যায় একখানা। কেবল ফিরে আসেনা তার স্বামী। আদরের সন্তানটি বড় হতে থাকে। বাড়ির বৃক্ষচারা বড় বৃক্ষ হয় একসময়। জীবন নামের ক্যালেন্ডারের গতিময় ধেয়ে চলার মনুষ্যদেহের সায়াহৃবেলা যেন।বছর কাটে ত্রিশটি।
(গ)
এলাকাটি বুড়োর কাছে একেবারেই অন্যরকম মনে হলো। আগের অনেককিছুই নেই,আবার অনেককিছুই নতুন হলো।তবে বেশ মুগ্ধময় পারিপার্শ্বিক। কেমন যেন অজানা অচেনা, অথচ কতোইনা আপন ঠেকলো। একটি মসজিদ বেশ উন্নত শোভায় শোভিত। জামায়াত দাঁড়িয়ে গেছে মাগরিবের। জামায়াতে দাঁড়ালো বুড়ো। ইমাম কেরাত টানে নিজের সমস্ত মাধুর্য ও সুমিষ্ট কন্ঠস্বরের কারুকার্য মিশিয়ে। টলমল ঝরতে থাকে বুড়োর চোখের পানি। প্রভুর বন্দনার এমন আবেগতাড়িত মিষ্টি সুরের কেরাত জীবনে যেন অতীতে কখনো শোনেনি বুড়ো। এই ইমামকে আল্লাহ্ আলাদা কিছু দিয়েছেন বুঝি!
(ঘ)
দরজায় খটখটে শব্দ। সাড়া নেই কিছুক্ষণ।বুঝা যায় ভেতর থেকে করপুটরতা কোনো দুখিণী নারীর বিধাতার তরে সরুকন্ঠী আরবীভাষার ফরিয়াদ। আবারো আওয়াজ দরজায় খটখট খটখট খটখট…। কান্নারত নাকিস্বরে সুধানো,” কে হে “?! জবাব আসে,” আমি “! আমি??? এ যে চেনা কন্ঠ মনে হয়। দরজা খুলে যায়। একে অপরকে দেখে অবাক ; বাকরুদ্ধ। তারপর জড়িয়ে ধরা। দীর্ঘ আলিঙ্গন। কতকসময় এভাবেই কাটে। অতপর নারীটির মানঅভিমান, অনুযোগ, অভিযোগ, শেকায়েত, ফের অভিমান, আবার বুড়োকে শুশ্রূষাও। একে অপরকে নিজেদের বিস্তারিত ইতিকথার পর বুড়োটি বললো,” আমানত”? নারীর সরল জিজ্ঞাসা,” মাগরেব পড়েছেন কোথায় “? বুড়ো বলেন,” এইতো,ওই মসজিদখানায়”। নারীকন্ঠের ফের প্রশ্ন,” ইমামটা কেমন “? বুড়ো বলেন,”সত্যি বলতে এমন সুদর্শন ও সুকন্ঠি ইমাম আমি জীবনে দেখিনি আগে।মুহূর্তের দেখাতেই মনে এতোটাই শ্রদ্ধা জেগেছে যে এই ইমামের তরে আমি অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি”। নারী কন্ঠের ফের প্রশ্ন,” আপনার সন্তানের জন্যে আপনি কতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন “? বুড়ো বলেন,” আমার সন্তানের জন্যে আমি জীবনের সবকিছুই ত্যাগস্বীকার করতে পারি এবং প্রয়োজনে আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও “! সুমিষ্ট মৃদু হেসেই নারীকন্ঠের স্বগৌরবে পরিবেশন,” হে আমার প্রিয়তম প্রাণেশ্বর,ওই ইমামটাই আপনার আমার সন্তান। আর তাকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতেই আপনার আমানত খেয়ানত করেছি আমি!।
Leave a Reply